প্রতিভার বিচ্ছুরণ ছিল বাপ্পি লাহিড়ী

 

- Advertisement -

প্রিয়সংবাদ ডেস্ক :: সারা গায়ে তাঁর সোনার অলংকার ঝলমল করতো। বাপ্পি লাহিড়ী একবার কলকাতার হায়াৎ রিজেন্সি হোটেলে নিজের সুইটে বসে আমাকে বলেছিলেন, আমি সোনার অলংকার পরে থাকি কেন জানো? বৈভব দেখানোর জন্যে নয়, দুনিয়ায় ভারতীয় ঐতিহ্য আর পরম্পরাকে তুলে ধরতে। লোকে ভুল বোঝে, ভাবে বাপ্পি বোধহয় টাকার দেমাগ দেখাচ্ছে।

অনেকেই যেটা জানেন না তা হল বাপ্পি লাহিড়ী ছিলেন আদ্যন্ত এক দেশপ্রেমিক। দেশের জন্যে তাঁর অনেক দানধ্যান আছে যা তিনি কখনও প্রকাশ করতেন না। জলপাইগুড়িতে জন্ম বাপ্পির যাঁর পোশাকি নাম ছিল অলকেশ। সঙ্গীৎশিল্পী অপরেশ আর বাঁশরী লাহিড়ীর একমাত্র পুত্র ছিলেন বাপ্পি। অপরেশ আর বাঁশরী ক্লাসিকাল গান করতেন, শ্যামা সংগীত গাইতেন। বাবা মায়ের কাছেই হাতেখড়ি বাপ্পির। মাত্র তিন বছর বয়েসে বাবা মায়ের গানের সঙ্গে বাপ্পির তবলা এক অলৌকিক লহরীর সৃষ্টি করতো।

বাপ্পির যখন ১৯ বছর বয়স তখন লাহিড়ীরা মুম্বাই চলে আসেন। সদ্য যুবা বাপ্পির প্রতিভা দেখে বিমুগ্ধ হয় বলিউড। মাত্র ২১ বছর বয়েসে নানহা সিপাহী ছবিতে সুরকারের ভূমিকায় দেখা যায় বাপ্পিকে। তার পরের বছর বাংলা ছবি দাদুর সংগীত পরিচালক বাপ্পি। দু বছর পরে তাহির হোসেন এর জখমে ছবিতে বাপ্পি সারা ভারতে সাফল্য পান। সংগীত পরিচালক হিসেবে একটির পর একটি হিট ছবি বলিউডে- ওয়ারদাত, ডিসকো ডান্সার, নমকহালাল, শরাবি, কমান্ডো, সাহেন, গ্যাংস্টার, সাইলাব… কত ছবি।

বাংলাতেও বাপ্পির মাথার মুকুটে অনেক পালক- অমর প্রেম, অমর সংগীত, আশা ও ভালোবাসা, মন্দিরা, বদনাম, রক্তলোলুপ ইত্যাদি। সত্তর, আশি এবং নব্বইয়ের প্রথমভাগটি ভারত মজেছিল বাপ্পির সিনথেসাইজ ফিউশন মিউজিকে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে বাপ্পি বিজেপিতে যোগ দেয় ও লোকসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় এর কাছে হারে। এইরকম একটি প্রতিভার মৃত্যু হল মাত্র উনোসত্তর বছর বয়েসে স্লিপ আপনিয়ায় ঘুমের মধ্যে শ্বাসরোধ হয়ে। বাপ্পির মৃত্যু নিঃসন্দেহে সংগীত জগতের একটি বড় ক্ষতি।

সর্বশেষ