নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘যোগ্যতার ভিত্তিতেই’ বিএনপির কাউন্সিলে তারেক রহমান দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন মন্তব্য করে তাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফখরুল ইসলাম বলেন, তার দলের নেতাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।
দুর্নীতি মামলায় দ-িত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে পদাধিকার বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। প্রায় এক দশক ধরে লন্ডন প্রবাসী তারেকও মায়ের সঙ্গে ওই মামলায় দ-িত হয়েছেন। এছাড়া মুদ্রাপাচারের আরেক মামলায় সাজা রয়েছে তার।
গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপির মতো একটা রাজনৈতিক দল, যারা নিজেদের মনে করে সব থেকে বড় দল, সব থেকে জনপ্রিয়, শক্তিশালী দল; তো সেই দলে কি একজন উপযুক্ত নেতা তারা বাংলাদেশে খুঁজে পেল না? একজন সাজাপ্রাপ্ত, পলাতক আসামিকে তাদের চেয়ারপারসন বানাতে হল এবং সে সেখান থেকে নেতৃত্ব দেয়।
“রাজনীতিতে এত বড় দেউলিয়াত্ব আর কি আছে! বাস্তবতাটা কী? বাংলাদেশের রাজনীতি কোথায় যাচ্ছে? এত বড় দেউলিয়াত্ব যে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তারা চেয়ারপারসন বানাচ্ছে।”
তার এই বক্তব্যের পরপরই এক আলোচনা সভায় প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর তৃতীয় মৃত্যবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স কক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ।
তিনি বলেন, আমাদের যিনি নেতা হয়েছেন আমাদের পার্টির কাউন্সিলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়ে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। আমাদের পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টির চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাহেব দায়িত্ব নেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের- এটা আমাদের গঠনতন্ত্রে আছে।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “উনি (তারেক রহমান) সাজাপ্রাপ্ত কোন মামলায়? যে মামলায় তিনি খালাস পেয়েছিলেন। তাকে খালাস দেবার অপরাধে ওই বিচারককে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে, টু সেইভ হিজ লাইফ।
“আপনারা (সরকার) সমস্ত সাজাপ্রাপ্তদের নিয়ে মন্ত্রিত্বে বসিয়ে রেখেছেন। আপনাদের মামলাগুলো নিজেরা নিজেরা তুলে নিয়েছেন। একটাও মামলা রাখেননি, সব তুলে নিয়েছেন। সকলের বেলায় সমান হবে, আপনাদের মামলাও থাকুক, অন্যদেরটাও থাকুক- দেখা যাক কী হয়? আর আদালত নিরপেক্ষ হোক।”
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ‘বন্দুকের নল দিয়ে দেশ থেকে বের করার’ অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সরকার বিচার বিভাগকে শেষ করে দিয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোথায়? আপনারা (সরকার) নিম্ন আদালতের সব ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছেন।”
তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তাকে তাদেরকে ‘ভয় দেখানো’ বলে মনে করছেন মির্জা ফখরুল।
“এই ভয় আমাদের দেখাচ্ছেন কেন? তিনি (তারেক রহমান) দেশে ফিরে আসতে হয় তিনি আসবেন। যেদিন তিনি মনে করবেন জন্মগত নাগরিক হিসেবে উনি উনার দেশে ফিরে আসবেন এবং সেদিন আপনারা দেখবেন তার জনপ্রিয়তা কত এবং মানুষ তাকে কত ভালোবাসে। সেইদিন দেখবেন কোটি কোটি মানুষ তাকে বরণ করার জন্য সেই এয়ারপোর্টে গিয়ে হাজির হয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘মেরুদ-হীন’ আখ্যায়িত করে মির্জা ফখরুল বলেছেন, এই সরকারের পক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সরকার একটা চুক্তি করলেন। এই চুক্তিতে এখন পর্যন্ত ৬ মাস হয়ে গেল একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি এবং পারবেন না। এখন যে অবস্থা আছে তাতে ফেরত পাঠানো যাবে না। এই মেরুদ-বিহীন সরকার এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারকে নিন্দা জানিয়ে একটাও রেজুলেশন নেয়নি।”
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব জনমতের সঙ্গে ‘প্রতারণা করেছেন’ বলেও অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।
এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “প্রথম কয়েক দিন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দিলেন না এবং এমনকি গুলিও করা হয়েছে তাদের ওপর। আমাদের দেশনেত্রী লন্ডন থেকে একটি বিবৃতি দিলেন এবং তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে কয়েকজন মন্ত্রী আসার পরে তখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তাদের ঢুকতে দিয়েছেন।”
এর মধ্যে মিয়ানমারের কাছ থেকে চাল কেনারও সমালোচনা করেছেন তিনি। আগামী নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমরা একা নয়, সমস্ত রাজনৈতিক দল বলছে নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপক্ষে সরকার দরকার। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান করতে হবে। অবশ্যই সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
“সবার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। এছাড়া সংসদ ভেঙে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনী নিয়োগ করতে হবে।”