আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দলসহ নানা কারণে খুন-খারাবিতে জড়িয়ে পড়ছে পাহাড়ের আঞ্চলিক চার সংগঠন। একটি খুনের রেশ না কাটতেই হচ্ছে আরেক খুন। এসব ঘটনায় যেমন খুন হচ্ছেন রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধি, আবার এসব ঘটনায় সন্দেহের তীর গিয়ে পড়ছে তাদের ওপরেই। একের পর এক খুন, অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনায় পাহাড়বাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়াচ্ছে টার্গেট কিলিং। এত কিছুর পরও পাহাড়ে তৎপর সশস্ত্র গ্রুপগুলোর অপতৎপরতা ঠেকাতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে অস্ত্রধারীর গুলিতে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএস (এমএন লারমা) সংস্কারপন্থি দলের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা খুন হন। গতকাল শুক্রবার তার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে একটি মাইক্রোবাসে গুলি চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে।
পাহাড়ে অস্ত্রধারীদের হাতে নির্বিচারে একের পর এক হত্যার ঘটনায় আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। নতুন করে শুরু হয়েছে টার্গেট কিলিং। মুখোশবাহিনী (ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক) ও জেএসএস সংস্কার গ্রুপ এই টার্গেট কিলিং চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাহাড়ে এই অপতৎপরতার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষও। দুর্বৃত্তদের আটক আর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের পরেও থেমে নেই মৃত্যুর মিছিল। তবে এই অশুভ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চায় পাহাড়ের মানুষ।
বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, গত পাঁচমাসে তিন মাসে পাহাড়ে ২৩ জন আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতাকে খুন করা হয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ৫ মাসে পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন ২৩ জন। হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে ৩৫ জনকে। অপহরণ হয়েছেন ইউপিডিএফের দুই নারীনেত্রীসহ ১৭ জন। এর বিপরীতে এই সময়ে ৫৯টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, ২ হাজার ৫১৯ রাউন্ড গুলিসহ ৫০ জনকে আটক করেন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। তারপরও থামছে না মৃত্যুর মিছিল।
এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক বাঞ্চিতা চাকমা বলেন, ‘অপরাজনীতির কারণেই পাহাড়ের এই ঘটনাগুলো ঘটছে, এটা দুঃখজনক’। যতদিন পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে বোধোদয় না হবে ততদিন এগুলো থামবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, বর্তমান চিত্রই পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের গণদাবির যথার্থতা প্রমাণ করে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা না হলে পাহাড়ে শান্তি আসবে না; মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে না।
মাঝখানে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বছর তিনেক পার্বত্যাঞ্চলের কোথাও রাজনৈতিক সংঘাতে প্রাণহানি ঘটেনি। ব্যাপক আলোচনা আছে যে, এ সময়ে পাহাড়ের তিন আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস (সন্ত লারমা), ইউপিডিএফ ও জেএসএস সংস্কার (এমএন লারমা) এর মধ্যকার ‘অস্ত্র বিরতি’ চলছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ‘ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক’ নামে আরেক আঞ্চলিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশের পর এই ‘সমঝোতা শান্তিতে ছেদ পড়ে। অভিযোগ উঠে, সংগঠনটি আত্মপ্রকাশের ১৮ দিনের মাথায় খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা (৩৮) খুন হন। এরপরই পাহাড়ে খুনোখুনি বাড়তে থাকে।’