spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায়

spot_img

 

- Advertisement -

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। বুধবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন প্রার্থনা করে আবেদনের শুনানি শেষ করেন তার আইনজীবীরা। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম এই আবেদনের বিরোধীতা করে। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে।

বুধবার দুপুরে জামিন আবেদনের শুনানির সময় খন্দকার মাহবুব হোসেন সহ বিএনপির শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ২টা ২৫ মিনিট থেকে জনাকীর্ণ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি করেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন। শুনানি সময় আদালতে উপস্থিত হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।

শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতে বলেন, জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে আদালত দেখেন সাজার পরিমান। এই মামলায় তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয়েছে। শুধু জরিমানাও হতে পারত। যে আইনে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে সেখানে সাজা বৃদ্ধির সুযোগ নেই। বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে কারাগারে রয়েছেন। তিনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। একজন বয়স্ক মহিলা এবং দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। পালিয়ে যাওয়ার অবস্থা তার নেই। আমরা মামলার ম্যারিটে যাচ্ছি না। তাকে জামিন দেয়া হোক। এই আদালতের জামিন দেয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার রয়েছে। আইনের বিধান অনুযায়ী তিনি জামিন পাবেন বলে আসাকরি।
তিনি আরো বলেন, সরকারও বলছে খালেদা জিয়ার মুক্তি নির্ভর করছে আদালতে ওপর। আওয়ামী লীগৈর সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি নির্ভর করছে আদালতের ওপর।

শুনানি শেষে খন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের এক না। বেগম খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বড় পদে থেকে দুর্নীতি করেছেন, অতএব তার অপরাধ ছোটভাবে দেখা যায় না। জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের উপমাহাদেশে রাজনীতিবিদরে বিরুদ্ধে এই ধরণের মামলা হযৈছে। ভারতের জয় ললিতাও মুখ্য মন্ত্রী ছিলেন। লালু প্রসাদ যাদব ও মুখ্য মন্ত্রী ছিলেন। তাদেরও দুর্নীতি মামলায় সাজা হয়েছিল, সেই ক্ষেত্রেও তাদের জামিন দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়াও জামিন পেতে পারেন।

শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে এই মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এখানে তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের কোনো অভিযোগ নেই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতের কোনো অভিযোগ করেনিনি। এরপর কিভাবে আত্মসাত হয়। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, এখানে সরকারের ফান্ডের কোনো টাকা নেই। তারপর আর কি থাকে। এছাড়া দুদক আইনের ৫ এর ২ ধারা দুর্নীতির কোনো সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। তিনি একই আদালতে তিনটি আদেশের কপি দেখিয়ে বলেন, ১০, ৭ ও ৫ বছরের সাজা মামলায় আপনারই জামিন দিয়েছেন। এছাড়া ৭ বছরের সাজা মামলায় হাইকোর্টের একক বেঞ্চও জামিন দিয়েছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যেদিন জেলে গেছেন পায়ে হেটে গেছেন। আর এখন হুইল চেয়ারে ছাড়া তলতে পারেন না। তিনি দীর্ঘদিন জেলে, দীর্ঘদিন অসুস্থ। পিজিতে তার চিকিৎসা হচ্ছে। উনার ডায়াবেটিস ১৬ এর নীচে নামে না। উনার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য বলেছেন তার আরো উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তিনি আদালতে উপস্থিত শতাধিক আইনজীবীদের দেখিয়ে বলেন, এই আইনজীবীরাও খালেদা জিয়ার পক্ষে দাঁড়াতে এসেছেন। যেকোনো বিবেচনায় আমরা তার জামিন প্রার্থনা করছি।

এরপর দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জামিন আবেদনের বিরোধীতা করে বলেন, সাজা হয়েছে দুদক আইনের ৫ এর ২ ধারায়। পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে সাজা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া পাবলিক সার্ভেন্ট ছিলেন।

দুদকের পক্ষে শুনানি শেষ হলে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির আদালতে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার আদালতে অন্য মামলায় ব্যস্ত আছেন। এজন্য তিনি সময় প্রার্থনা করেন।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানির সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, কায়সার কামাল, নওশাদ জমির, আমিনুল ইসলাম, মো: আসাদুজ্জামান, রাগীব রউফ চৌধুরী, কামরুজ্জামান মামুন, জিয়উদ্দিন জিয়া, মো: আখতারুজ্জামান, মোহাম্মদ আলী, মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, আনিছুর রহমান খান, মাসুদ রানা, সালমা সুলতানা সোমা, জুলফিকার আলী জুনু, মির্জা আল মাহমুদ, ফাইয়াজ জিবরান, গোলাম আকতার প্রমুখ। এ সময় বিএনপি নেতা হাবিবুন নবী খান সোহেল, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা জামান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২৮ জুলাই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিন আবেদনের শুনানি করতে চাইলে আদালত ৩০ জুলাই দিন ধার্য করেন।

গত ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনটি নথিভূক্ত করে দুই মাসের মধ্যে মামলার নথি তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর গত ২০ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ থেকে হাইকোর্টে এ মামলার নথি পাঠানো হয়।

গত ১৮ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল আবেদন করেন বেগম খালেদা জিয়া। গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদ-ে দেয়া হয়। পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা টাকা জরিমানা করা হয়।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ