spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা: অন্যরকম ছাত্রলীগ নেতারা সতর্ক

spot_img

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: এ যেন এক অন্যরকম ছাত্রলীগ! সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেই বিলাসী গাড়ি এবং দামি ফ্ল্যাট। মোটরসাইকেলেই যাতায়াত, থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের কক্ষে। গভীর রাতে ঘুমিয়েও উঠতে হচ্ছে সকালেই।

সময়মতো যাচ্ছেন কর্মসূচিতে। পুরনো সেই অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ আর দলাদলি নেই। পদবঞ্চিতরা যোগ দিচ্ছেন সব কর্মসূচিতে। ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়ার পর এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগে।

এরই মধ্যে প্রোটোকল ছাড়াই চলাফেরার ঘোষণা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব বুঝতে পেরেই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংগঠন পরিচালনা ও ব্যক্তিজীবনে সতর্ক।

ছাত্রলীগের সভাপতির পদ খোয়ানোর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সিনেট থেকে পদত্যাগ করেছেন শোভন। প্রধানমন্ত্রীর যাতে বদনাম না হয়, সে জন্য এ সিদ্ধান্ত বলে যুগান্তরকে জানিয়েছেন শোভন। তবে গোলাম রাব্বানী ডাকসুর জিএস ও সিনেট সদস্যপদে এখনও বহাল।

তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইলেও এই দুই পদ নিয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে গোলাম রাব্বানীকে ডাকসু থেকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন জোরালো হয়ে উঠছে ঢাবিতে। কথা হয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নেত্রীর আমানত। যে সময় হাতে আছে তার যথাযথ ব্যবহার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে। সবাইকে নিয়ে কাজ করব। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী চলব। যোগ্যদের সব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মূল্যায়নের চেষ্টা থাকবে।

সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষায় নেতাকর্মীদের সহযোগিতা চাই। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাড়াও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা, ঢাবি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের অন্যতম সাবেক দফতরবিষয়ক উপ-সম্পাদক নকিবুল ইসলাম সুমন যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের পর বিদ্রোহ করার মতো আর কোনো কারণ থাকতে পারে না। বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে এক শর্তে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব।

শর্তটা হল- প্রধানমন্ত্রী কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিতে বলেছেন, সেটা দ্রুত করতে হবে। প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব হলেও বর্তমান নেতৃত্বের বাইরে না গিয়ে ভেতরে থেকেই আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমস্যার সমাধান করব।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয় বলেন, ছাত্রলীগের কারও বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গোলাম রাব্বানী ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচন করে ডাকসুর জিএস হয়েছেন, তিনি ওই পদে আর থাকতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, ডাকসু এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি ডাকসুর জিএস থাকবেন কি না, সেটা ঢাবি নির্ধারণ করবে।

জয় বলেন, সাধ্যমতো চেষ্টা করব সবার সহযোগিতায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন করার। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশের কোনো ঘটনা যদি ঘটে থাকে, আপনাদের সহযোগিতা এবং প্রয়োজন হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিনেটের সদস্যপদ ছাড়লেন শোভন : ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ হারানোর পর এবার ঢাবি সিনেটের সদস্যপদ ছাড়লেন শোভন। পদত্যাগপত্রে তিনি ‘ব্যক্তিগত সমস্যা’র কথা উল্লেখ করেছেন।

শোভনের পক্ষে ছাত্রলীগের দুই নেতা সিনেটের চেয়ারম্যান ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে যুগান্তরকে শোভন বলেন, আমি চাই না আমার জন্য নেত্রীর বদনাম হোক। সে জন্য আগেভাগেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

রাব্বানীকে ডাকসুর জিএস পদ থেকে অপসারণের দাবি : এদিকে ডাকসুর জিএস পদ থেকে গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। পাশাপাশি ঢাবি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ‘দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে জোটের পক্ষ থেকে সমর্থন জানানো হয়েছে।

সোমবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষ থেকে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বক্তব্য দেন। ছাত্রজোটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে রাব্বানীর দিকে ইঙ্গিত করে নোবেল বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে নিজ সংগঠন থেকে অব্যাহতি পাওয়া কোনো ব্যক্তি ডাকসুর কোনো পদে থাকতে পারেন না। বর্তমান বাস্তবতায় ডাকসুর ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে অবিলম্বে এই ডাকসু অবৈধ ঘোষণা করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।

ক্ষমা চাইলেন রাব্বানী : সোমবার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে ফের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন রাব্বানী। অপসারণের দু’দিন আগেও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি। তবে ডাকসুর জিএস ও সিনেট থেকে পদত্যাগের বিষয়ে তিনি ওই স্ট্যাটাসে কিছু লেখেননি।

এ বিষয়ে জানতে রাব্বানীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। রাব্বানী লেখেন, মমতাময়ী নেত্রী, আপনার মনে কষ্ট দিয়েছি, আমি অনুতপ্ত, ক্ষমাপ্রার্থী। প্রিয় অগ্রজ ও অনুজ, আপনাদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির পুরো মেলবন্ধন ঘটাতে পারিনি বলে আপনাদের কাছেও ক্ষমাপ্রার্থী।

মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আমিও ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নই। তবে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে আবেগ-ভালোবাসার এই প্রাণের সংগঠনের নীতি-আদর্শ পরিপন্থী ‘গর্হিত কোনো অপরাধ’ করিনি।

আনীত অভিযোগের কতটা ষড়যন্ত্রমূলক আর অতিরঞ্জিত, সময় ঠিক বলে দেবে। প্রাণপ্রিয় আপা, আপনি আদর্শিক পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের সুযোগ্য তনয়া, ১৮ কোটি মানুষের আশার বাতিঘর। আপনার দিগন্তবিস্তৃত স্নেহের আঁচল, এক কোণে যেন ঠাঁই পাই। আপনার ক্ষমা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বাকিটা জীবন চলতে চাই। যুগান্তর

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ