বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
spot_img

৭১ বাংলা টিভির সাংবাদিক!

 

- Advertisement -

গত ১৬ ডিসেম্বর। সপরিবারে ঘুরছিলাম চিড়িয়াখানা থেকে সাগরপাড়। ঘোরার এক পর্যায়ে ফোন করলাম অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা সারওয়ার জাহানকে। ভাবলাম কাট্টলি বিচে তার মালিকানাধীন ( এটি তাঁর প্রয়াত স্বামীর রেখে যাওয়া জায়গা) নিরুপমা নিরিবিলি পিকনিক স্পটে যাব। ওপ্রান্থ থেকে আপা জানালেন তিনি সেখানে আছেন। কাছে থাকলে যাতে যাই। কয়েক মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাই সেখানে। সপরিবারে দেখে তিনি অবাক। দোয়া, মুনাজাতকে কাছে পেয়ে আদর করলেন। তারা ছুটোছুটি করছিল এদিক ওদিক। চা, নাস্তা সারতে সময় এগিয়ে আসে। সূর্য তখন ডুবোডুবো। আমরা উঠছিলাম গাড়িতে।

এমন সময় দেখলাম এক মোটর সাইকেলে তিন আরোহি হনহনিয়ে ঢুকে পড়ে নিরিবিলির ভিতর। চালকের পেছনের একজনের হাতে ভিডিও ক্যামেরা, আরেকজনের হাতে ৭১ বাংলা টিভি লেখা বুম। আমি গাড়িতে উঠব, এমন অবস্থায় আবার ছুটলাম তাদের দিকে। মনে আগ্রহ জাগে দেখি তারা কী করে।

আপা গেইট বরাবর চেয়ারে বসা। আরেক পাশে তাঁর বড়ভাই। তিনজন মোটর বাইক থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল। ভাবসাবে মনে হল তারা একটা কিছু। তাদের সেখানে প্রবেশের কারণ জানতে চান আপার ভাই। ওদের একজনের জবাব, ‘ দেখছেন না আমরা সাংবাদিক। কাজ করছি’। আপা বললেন, ‘এখানে আপনাদের কাজ কী’। আরেকজন বলল, ‘ সাংবাদিক বলেছে শুনেননি’। আমি বললাম, এখানে তো কোনো ঘটনা ঘটেনি। আপনাদের কাজ তো ঘটনাস্থলে। এটা তো পিকনিক স্পট। ওরা বলল, এখানে কি হয় দেখতে এসেছি, নিউজ করব। আপার ভাই বললেন, ‘পিকনিক হয়। আজও রোটারি ক্লাব করেছে। ওরা এইমাত্র গেছেন’। সামনের পুকুর দেখিয়ে বলেন মাছ চাষও হয়।

আমি বললাম, আপনারা সাংবাদিক, ভাল কথা। এভাবে কোনো জায়গায় ঢোকার নিয়ম আছে? একজন একটু রাগের স্বরে বলে, আপনি কথা বেশি বলছেন। জানেন, আমরা মানুষকে উঠাতেও পারি আবার নিচেও নামাতে পারি। এটা শুনে আর মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। ধরে ফেলি তাকে। আপাকে বললাম, পুলিশের কাছে খবর দিতে।

তাদের কাছে জানতে চাইলাম তারা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব কিংবা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য কিনা। জবাব দিল, না। কতিপয় নেতাকে চেনার কথা বলে। আমার নাম বলে জানতে চাইলাম চিনে কিনা। বলে, চিনি। কিভাবে চিন? আর জবাব নেই। তারপর যখন আশপাশের কর্মচারিদের ডেকে তাদের তিনজনকে বাধার জন্য বলি তখন সূর নরম হতে থাকে।

যখন বলি যার নাম বলেছি সেই লোক আমি। তখন আরও অবাক তারা। পুলিশে দেয়ার কথা বলাতে অনুনয় বিনয় শুরু করে। আপা সবার নাম ঠিকানা নিয়ে সেল ফোনে ছবি তুলে রাখেন। এক পর্যায়ে বলে, এবারের মতো মাফ করে দিতে।

জানতে চাইলাম মূলত: তাদের কার কী পেশা। একজন বলে, সে মোবাইল মেকানিক। তার হাতে বুম ছিল। ক্যামেরাওয়ালা বেকার। মোটর বাইক চালক ক’ দিন হলো তাদের সাথে ভিড়েছে।
কথায় বুঝলাম তারা সাংবাদিকতার স বুঝে না কিংবা জানে না। তাদের কাজ হলো এভাবে হম্বিতম্বি করে চাঁদাবাজি।

অনুনয় বিনয় করায় পুলিশে দেননি আপা। তাদের ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করেন। আমিও বললাম, এসব প্রতারণা ছেড়ে কাজকর্ম করে খেতে। নইলে পার পাবে না।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

মহসিন কাজী ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া

সর্বশেষ