২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় বৌদ্ধদের দ্বারা হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এসোসিয়েট প্রেস জানায়, এই গণহত্যাকা-ে মিয়ানমার বাহিনীর বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেয়া শিক্ষক ও ধর্মীয় নেতারা এক সাক্ষাৎকারে এপিকে জানান, ‘সেনাবাহিনী খুব সুক্ষ্মভাবে শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। যাতে এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খোলার মত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ে কোন বিশেষ ব্যক্তি না থাকে।’ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মোহাম্মদ হাশিম বলেন, ‘আমার ভাই সেনাদের কাছে বারবার অনুরোধ করেছিল তাকে না মারার জন্য। সে ছিল একজন শিক্ষক, চিৎকার করে এটি বলার পাশাপাশি আইডি কার্ডও দেখিয়েছিল। কিন্তু সরকারের শিক্ষিত লোকদের হত্যা করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমার ভাইয়ের শেষ রক্ষা হয় নি।’
২৬ বছর বয়সী অংশ এবং বিজ্ঞানের শিক্ষক রাহিম বলেন, ‘স্থানীয় স্কুলে শিশুদের পড়াতাম বলে সেনাবাহিনী আমাকে ভালভাবেই জানত। আমিও জানতাম যদি আমি ধরা পড়ি তাহলে মৃত্যু ছাড়া আর কোন গতি নেই।’
এপি জানায়, গবেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের মুসলিম নিধনের এই ঘটনার সঙ্গে হলোকাস্টের কোন পার্থক্য নেই। ইউএসসি সোয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান গবেষক কারেন জগবুলত বলেন, ‘প্রথমে তারা ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতাদের লক্ষ্যবস্তু বানায়, এবং এরপর সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলা চালায়।’ নাম ও পদ প্রকাশ না করার শর্তে মিয়ানমারে এক সেনা কর্মকর্তা এপিকে জানান, ‘আজকের দিনে তিনি আর মিয়ানমারে ‘রোহিঙ্গা’ বলে কোন শব্দের অস্তিত্ব মানতে চান না।’
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল এবং হাইকমিশনের করা এক প্রতিবেদনে ৬৫ শরণার্থীর সাক্ষাৎকারে দেখা যায়, মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী প্রথমে শিক্ষক, পরে সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় নেতা ও ক্রমে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অভিজাত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু বানায়। যাতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ইতিহাস এবং সংস্কৃতির কোন অস্তিত্ব না থাকে। নভেম্বরে এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, জানায় মিয়ানমার পরিকল্পিতভাবে এই গণহত্যা চালিয়েছে। এসোসিয়েট প্রেস।