নিজস্ব প্রতিবেদক :: চট্টগ্রাম নগরের ১৬ থানা এলাকায় বছরের ব্যবধানে বেড়েছে শিশু নির্যাতন। ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে এ ঘটনায় মামলা হয়েছে দ্বিগুণ। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নগরের ১৬ থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছে পুলিশ।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বছরটিতে শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৪৩টি। আগের বছর ২০২১ সালে মামলার সংখ্যা ছিল ৬৬টি। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে এ সংক্রান্ত মামলা বেড়েছে দ্বিগুণ।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম জেলার ১৮ থানায়ও বেড়েছে শিশু নির্যাতনের মামলা। ২০২২ সালে ১৮ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ৩২৩টি। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু নির্যাতনের মামলা বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এসআই মল্লিকা দাশ রায়।
তিনি জানান, গত জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১২৩টি। এর মধ্যে ১০০টি হয়েছে শিশু নির্যাতনের ঘটনায়।
একসময় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটলেও প্রতিকার চাইতে জানতো না তারা। বর্তমানে পুলিশের নানা ধরনের উদ্যোগের কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার সংখ্যা বাড়ছে বলে উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ইনচার্জ ও নগর পুলিশের এডিসি (পিআর) স্পিনা রানী প্রামাণিক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যথাযথ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হলে বাড়াতে হবে জনবল। আইন প্রয়োগে রাখতে হবে নজরদারি। পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে যে আইন রয়েছে, তা মূলত প্রতিরোধমূলক। সেটিও ঠিকঠাক প্রয়োগ করা হচ্ছে না। এজন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ২০০৯ সালের হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন, বাল্যবিবাহ, পারিবারিক নির্যাতনসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একসঙ্গে কাজ করা, মামলাগুলোর দ্রুত বিচার করা, মামলার তদন্ত রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখা, প্রান্তিক গোষ্ঠীর (প্রতিবন্ধী, হিজড়া) জন্য বৈষম্যহীন আইন পরিষেবা নিশ্চিত করা, সব ধরনের ধর্ষণ আইনের আওতাভুক্ত করার জন্য ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা, নির্যাতনের ঘটনা ঘটার পর সাংবাদিকদের তা প্রকাশ ও নিয়মিত ফলোআপ করা ইত্যাদি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সমাজবিজ্ঞানী ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শিশুরা অবুঝ, অল্পকিছুতে পোষ মানানো যায়। আজকাল শিশু-কিশোরদের দিয়ে মাদক পাচার থেকে শুরু করে অসামাজিক কাজ করানো হচ্ছে। কাজ করতে না চাইলে তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে মা-বাবা, শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজকর্মী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম-সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশু-সংবেদনশীল একটি সমাজ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার। শিশুদের অধস্তন করে দেখার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা জরুরি।