চলতি বছরের ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কোনো দল বা গোষ্ঠির জন্য থেমে না থেকে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই নির্বাচন দিতে চায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ও প্রাথী চুড়ান্ত করছে দলটি। তবে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিভিন্ন মামলা, হামলা আর সঠিক নির্দেশনার অভাবে বর্তমানে বিএনপি সবচেয়ে সংকটময় সময় পাড় করছে বলে মনে করেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা ও রাজনীতিবিদরা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠায় আদালত। এরপর তাকে আরো বেশকয়েকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলে ওই মামলায় জামিন হলেও অন্য সব মামলাগুলোতে জামিন না হওয়ায় মুক্তি মিলছে না তাঁর। অপরদিকে খালেদা জিয়া কারান্তরিন হওয়ার পর তার ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও বিভিন্ন মামলা আর গ্রেফতারী পরোয়ানার মুখে র্দীঘদিন ধরে বিদেশে থাকায় তিনিও দলকে মাঠে নেমে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। একাধিক রাজনীতিবিদের মতে ঘরে বসে বা দেশের বাহিরে থেকে কোন দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নেওয়া খুব কঠিন। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে হলে মাঠে নামা জরুরি। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও আর মাত্র ৭ মাস বাকি।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক রাজনীতিকের মতে, বিএনপির বর্তমান যে রাজনৈতিক অবস্থা তাতে করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবেন না বলে-ই মনে করেন তিনি। এবং পর পর তিনবার ক্ষমতা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে এ দলের নেতাকর্মীদের মনোবলও ধরে রাখা কঠিন হবে। ফলে দলটি রাজনীতির মাঠ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন খুব শিগগিরই তারা খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসবেন। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নির্বাচন হলে সে নির্বাচনে হারার সম্ভবনাই বেশি বলে মনে করছেন তারা। কারণ এ দলের নেতাকর্মীদের মতে এই সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ফলে সামনের নির্বাচন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবর পড়লে দেখা যায় বিগত সময়ে অর্থাৎ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসে এরপর বিএনপি বেশকিছুদিন আন্দোলন ও জ্বালাও পোড়াও করলেও সরকার টিকে যাওয়ার এক পর্যায়ে এর তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটি বিরাট অংশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন। যারা বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় উপজেলায় আওয়ামী লীগের ছোট বা বড় পদ পদবি নিয়ে কাজ করছেন। ফলে তৃণমূলে বিগত সময়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী কমেছে। এছাড়া অনেক বিএনপির কর্মী আছেন যারা রাজনীতি ছেড়ে ব্যবসায়-বাণিজ্য বা চাকুরি করছেন।
বিভিন্ন কারণেই রাজনীতিক সংকটে আছে বিএনপি। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছেন বিএনপির রাজনীতি করার কোনো অধীকার নেই। বিএনপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছে ক্ষমতাসীন এ দলের নেতারা। যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেয়া, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা , গরিবের টাকা মেরে খাওয়া নানান অভিযোগ বিএনপির বিরুদ্ধে।
এদিকে গত ৩০ জুন গনভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় অস্ত্র দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। যে ক্ষমতাগ্রহণকে উচ্চ আদালত অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণ হিসেবে রায় দেয়। এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরেই ওই ক্ষমতায় বসে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে গড়ে তুললো রাজনৈতিক দল। প্রশ্ন হচ্ছে- একটা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী তার ক্ষমতায় বসে থেকে যে দল সৃষ্টি হয় সে দলও তো বলতে গেলে অবৈধ দল-ই হয়ে যায়। (বিটিভি – সরাসরি)
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর অনেকের মনেই নতুন প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে বিএনপিকে অবৈধ দল হিসেবে ঘোষণা করার চেষ্টা চলছে কিনা।
এদিকে বিগত কয়েকদিনে বিএনপির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের যেসব মন্তব্য তাতে করে মনে হচ্ছে বিএনপিকে এখন আর কোন দল মনে করছেন না তারা।
আওয়ামী লীগের প্রচার এবং প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এর মতে ‘বিএনপির অবস্থা এখন বর্ষাকালের ব্যাঙের মতো। বৃষ্টির জন্য ব্যাঙ যেমন তর্জন গর্জন করে, ঠিক তেমনি খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে বিএনপি একই কাজ করছে।’ (বাংলা ট্রিবিউন- ২৯ জানুয়ারী ২০১৮)
অপরদিকে বিএনপির অবস্থা এখন শূন্য কলসির মতো বলে মনে করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি মনে করেন, নেত্রীর জন্য কান্নাকাটি করা ছাড়া তাদের আর করার কিছু নেই। (নয়াদিগন্ত – ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮)
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর মতে, ‘বিএনপির অবস্থা এখন ফান্দে পড়ে বগা কান্দে’ (সমকাল – ১০ ডিসেম্বর ২০১৭)