মো.মুক্তার হোসেন বাবু : চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলাগুলোতে প্রায় ১২ লক্ষ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে শনিবার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)’র আওতাধীন মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৫ লক্ষ ও ১৪ উপজেলার ২০০ ইউনিয়নের ৬০০টি ওয়ার্ডে ৭ লক্ষ শিশুকে এই ক্যাপসুল খাওয়ানোর কথা রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চসিক ও চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
আগামীকাল শনিবার চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলায় ৭ লাখ ৫২ হাজার ৭০৪ জন শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সভাকক্ষে জেলা সাংবাদিক ওরিয়েন্টেশন সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। সভায় এ বছর সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে টিকা খাওয়ানো হবে উল্লেখ করে সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, কয়েক বছর আগে টিকা খাওয়ানোর পর বিভিন্ন বয়সী শিশুদের মধ্যে সমস্যা হওয়ার অভিযোগ ছিলো। কিন্তু গেল বছর থেকে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানান, শনিবার জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন শুরু হবে। ওইদিন ১৪টি উপজেলায় ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী সব শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এর মধ্যে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী ৮৩ হাজার ৭৮২ জন শিশুদের নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল ও ১২ থেকে ৫৯ বয়সের ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৯২২ জন শিশুকে লাল রঙের ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। তিনি বলেন, ওইদিন চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার ২০০ ইউনিয়নের ৬০০টি ওয়ার্ডে তদারকি করবেন ৬০০ জন দায়িত্বরত কর্মকর্তা। এ ছাড়া মোট স্বাস্থ্য সহকারীর সংখ্যা থাকবেন ৬১০ জন। ৫ হাজার ৪৯টি কেন্দ্রে ২জন করে ১০ হাজার ৯৮ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন।
এদিকে চসিক অধীনে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে (স্থায়ী/অস্থায়ী) ১ হাজার ২৮৮টি কেন্দ্রে একই দিন ৫ লক্ষাধিক শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।জাতীয় ভিটামিন ‘এ’প্লাস ক্যাম্পেইনের অধীনে এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী ৮০ হাজার শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১ লাখ ইউনিট) এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৪ লাখ ৩০ হাজার শিশুকে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১ লাখ ইউনিট) ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মহানগরীর সদরঘাটে মেমন হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী। তিনি জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দেশব্যাপী অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষে শনিবার জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন (১ম রাউন্ড) ২০১৮ পালিত হবে। এ লক্ষে চসিক জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন সফলভাবে বাস্তবায়নের সর্ব্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এদিন সকালে নগরের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করবেন। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর উচ্চহার বজায় রাখা, শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি ও ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা ও পুষ্টি বিষয়ক অন্যান্য কর্মসূচি সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করাই জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য।
তিনি আরও বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল শুধুমাত্র অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব থেকে শিশুদের রক্ষা করে তাই নয়, এটি ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল ও জটিলতা কমায় এবং সর্বোপরি শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস করে। বাংলাদেশের শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ প্লাসের অভাবজনিত সমস্যা দূরীকরণে এ কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করতে হবে। নগরের ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলের সার্বিক সহযোগিতা ছাড়াও নগরের সরকারি-বসেরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও ৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, সকল জোনাল মেডিকেল অফিসার, ইপিআই টেকনিশিয়ান, সুপারভাইজার, স্বাস্থ্য সহকারী, টিকাদান ও স্বাস্থ্যকর্মী এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন। ২০১৭ সালের ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন কার্যক্রমে চসিকের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল শতকরা ৯৯ শতাংশ। যেটি বাংলাদেশের সর্ব্বোচ অর্জন।