লেখক: মেহেদী হাসান 

ছাত্র রাজনীতি ও বাংলাদেশ:
——————————————
প্রথমেই বলি উচ্চশিক্ষায় অর্থাৎ ভার্সিটি লেভেলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন থাকতে পারে কিন্তু ছাত্র রাজনীতি চর্চার কোন তাত্বিক ভিত্তি নেই। ১০০% বাবা – মা বলবে – আমি আমার ছেলে – মেয়েকে পড়ালেখা করতে পাঠিয়েছি – রাজনীতি চর্চা করতে নয়।
• ছাত্র সংসদ কি?———-
ছাত্র সংসদ হচ্ছে এমন একটি কার্যনির্বাহী পরিষদ যেটি ছাত্রদের মধ্যে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও দাবি দাওয়া আদায়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। এখানে রাজনীতির কোন গন্ধ নেই।
• বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি কি? ———-
বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি দ্বারা শিক্ষার তৃতীয় স্তর থেকে জাতীয় স্তরে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সমর্থন প্রদর্শন করে সংগঠিত কার্যকলাপ ও সংস্কৃতিকে বোঝায়। এটা ছাত্র সংসদ ধারণার সাথে কোনভাবে মিলে না। অর্থাৎ ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করা স্বাভাবিক যুক্তিতে অবৈধ।
• নিকট অতীতে ছাত্র রাজনীতি কি ছিল? ————-
অনেক ভালো সাধারণ ছাত্ররা, সিনিয়রদের গতানুগতিক গনডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে নষ্ট হয়ে – মদ-গাঁজা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভাড়ায় শক্তি প্রদর্শন, মাদক বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, হলে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি জোরপূর্বক রাজনৈতিক মিছিল – মিটিংয়ে নিয়ে যাওয়া ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, কাটা রাইফেল ও রিভলবার, খুনাখুনি ইত্যাদি করে যেটা পড়ালেখার সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
• যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় ছাত্র সংসদ, ছাত্র রাজনীতি কি আছে? ————-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই ছাত্র সরকার বিদ্যমান। ক্যাম্পাসে কোন ছাত্র রাজনীতি নেই। কানাডাতেও নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়-স্পন্সরকৃত ডর্মে থাকে । এর অর্থ হল তারা খায়, ঘুমায়, আড্ডা দেয়, পড়াশোনা করে – মূলত প্রায় সবকিছুই ‘ক্যাম্পাসে’ করে।
• যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় শিক্ষা ব্যবস্থা ————
উভয় দেশে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা ফ্রি – সরকার বহন করে। উচ্চশিক্ষা অনেক ব্যয়বহুল। যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিটি কলেজে খরচ কম কিন্তু কানাডায় ভার্সিটির কাছাকাছি।
কানাডায় বছরে উচ্চশিক্ষায় পড়তে আনুমানিক ১৪০০০ ডলার ( ১১.৯ লক্ষ টাকা) লাগে ;এমবিএ – মেডিকেলে পড়তে খরচ দ্বিগুণ। এটা ওদের দেশের নাগরিকদের জন্য – বিদেশিদের জন্য দ্বিগুণ। ওদের দেশের ছাত্ররা পড়ার জন্য লোন নিতে পারে, পার টাইম কাজ করে। কোন ভর্তুকি নেই। ওরা অর্থনৈতিক, পড়াশুনার চাপে থাকে। কারণ সেমিস্টার পাশ না করলে আবার নতুন করে টিউশন ফি দিতে হবে। আমাদের মত ক্যাম্পাসে নষ্ট রাজনৈতিক কাজকর্ম করার তাদের ঐতিহ্য/ প্রথা , গতানুগতিকতা নেই আমাদের প্রাইভেট ভার্সিটির মত। কেউ যদি রাজনীতি করতে চায় , বাইরে পার্টি অফিসে যায়, ভার্সিটির সাথে এর কোন যোগাযোগ নেই।
প্রকৃতপক্ষে সবাই উচ্চশিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজনও নেই কারণ আমরা সবাইকে শিক্ষানুযায়ী কর্মসংস্থান দিতে পারব না।
• কানাডায় জাতীয় নির্বাচন পূর্ববর্তী প্রচারণা ———-
প্রার্থীরা রাস্তার মোড়ে সাইনবোর্ডর মত নিজের নির্বাচনী পোস্টার লাগায় ও নির্বাচনের পর নিজেরাই সরিয়ে নেয়। কোন মাইকিং নেই, কোন জনসভা নেই। Online প্রচারণা করে। পার্টির প্রধানরা শুধু কোন খালি জায়গায় জনসভা করে, অন্য কেউ করে না।
• বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হয় না কেন? ———-
৫ ই আগষ্টের পর অনেক প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ। রাজনীতিবিদদের ধারণা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকলে ছাত্র শিবির এগিয়ে যাবে – জামায়াত নির্বাচনে বেশী সিট পাবে। ৩-৪ জন ক্লাসমেট যদি একসাথে চলাফেরা করে , খায়, পড়ালেখা করে – কারো ভাবা উচিত না তারা ছাত্র রাজনীতি করছে – কারণ সবার বাবা – মা অনেক আশা করে তাকে উচ্চশিক্ষায় পাঠিয়েছে – রাজনীতি করার জন্য নয়। তলে তলে রাজনীতি চর্চা করলে করুক – কিছু আসে যায় না। আমি মনে করি জাতীয় রাজনীতিতে এর কোন প্রভাব পড়ে না। অযথা বন্ধু বন্ধু মারামারি করে, জুনিয়র সিনিয়রকে মারে, সিনিয়র জুনিয়রকে মারে।
৫ ইআগষ্ট ও গত নির্বাচনের পূর্বে খেয়াল করবেন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার বিরোধীরা অনেক আন্দোলন করেছে, আওয়ামী লীগও করেছে পাশাপাশি কিন্তু কেউ কারও উপর হামলা করে না, অস্ত্রের মহড়া করা তো প্রশ্নই উঠে না। পুলিশ সাথে সাথে ধরে নিয়ে যাবে সে যেই হোক। উচ্চশিক্ষায় আক্রমণকারী ও ভুক্তভোগী – দুই পক্ষকেই ভার্সিটি প্রশাসনের কাছে সোপর্দ করতে হবে – কোন ছাড় নেই। জাতীয় রাজনীতির মারামারির ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। উচ্চশিক্ষায় কোন শিক্ষক রাজনীতি করতে পারবে না। কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিতে পারবে না। ৫ ই আগস্ট পরবর্তী অবস্থায় বাকিটা ছাত্র – জনতা, দেশের প্রশাসন বিচার করবে। নষ্ট রাজনীতিবিদদের সবচেয়ে পছন্দ ছাত্র। কারণ এদেরকে সবচেয়ে সহজে ব্যবহার করা যায়। এদের বয়স অল্প – নষ্ট বড় ভাইরা, রাজনীতিবিদরা তাদের নষ্ট কাজে অতি সহজে ব্যবহার করে। এদের পিছুটান নেই, সংসার নেই – নিজেকে ছাড়া পরিবার নিয়ে তেমন ভাবতে হয় না।
• বর্তমানে ডিজিটাল, মাল্টিমিডিয়া যুগে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন আছে কি? ————-
না। পূর্বে ইসলামী জ্ঞান ওয়াজ থেকে, রাজনৈতিক জ্ঞান জনসভা বা বড় নেতা থেকে বা ভার্সিটি লেভেলের বড় ভাই থেকে তার সাহচর্যে শিখত। এখন রাজনীতি শিখার জন্য একটা স্মার্ট মোবাইল যথেষ্ট। যার ফলাফল দেখেছি ২৪ এর গণ আন্দোলনে নাহিদ, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আসিফ …….. প্রাইভেট ভার্সিটির নাম না জানা অনেকে, নাম না জানা সারাদেশে অসংখ্য ছাত্রদের অবদান। ছাত্রলীগ সারাদেশে এতবছর ভুল ছাত্র রাজনীতি করে কি লাভ হল? বুঝা গেল ছাত্র রাজনীতি করিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখবেন – বাংলাদেশে ঐ দিন শেষ, যদি না পূর্বের মত ছাত্র, জাতীয় রাজনীতি চর্চা করা হয়। পূর্বে রাজনৈতিক দল থেকে কলাগাছ প্রার্থী নমিনেশন দিলেও পাশ করত, প্রার্থীর ব্যক্তিগত যোগ্যতা দেখা হত না। ভবিষ্যত নির্বাচনে এই পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয়।
————————————————————————
• নতুন রাজনৈতিক দল NCP এর প্রতি কিছু উপদেশ ———-
প্রথমে ২০১৮ এর নির্বাচনের ফলাফলটা দেখ। ২০০৮ এ ৩০ টি ও ২০১৮ এ বিএনপি ৫ টি সিট পেয়েছিল যদিও সঠিক নির্বাচন হয়নি – ওরা কি রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছে? জামায়াত এর ফলাফল দেখ –
১৯৮৬( ১০), ১৯৯১(১৮), ১৯৯৬(৩), ২০০১( ১৭) , ২০০৮(২), ২০১৮(০), ২০২৪(০)
– ওরা কি রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছে?
————————————————————————
•১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন- ২০১৮ – ২৯৯ আসন। ∆আওয়ামী লীগ – ২৫৯। ∆জাতীয় পার্টি – ২০। ∆ বিএনপি – ৫টি । ∆গণফোরাম -২টি।
∆ ওয়ার্কার্স পার্টি – ৩ টি।
∆ জাসদ – ২ টি
∆ বিকল্প ধারা – ২ টি
∆ জাতীয় পার্টি( জেপি) – ১ টি।
∆ তরিকত ফেডারেশন – ১ টি।
∆স্বতন্ত্র প্রার্থীরা – ৩টি।
এ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮০.২০ শতাংশ। মেয়াদ – ২০১৯- ২০২৩)
————————————————————————
NCP জাতীয় নির্বাচনে ৫-১৫ টা – যে কয়টা সিট পাক কোন সমস্যা নেই। প্রথমে আদর্শ রাজনীতি শিখ ও কর।
মনে রাখবে রাজনীতি হচ্ছে বৃহত্তর আঙ্গিকে মানুষ ও দেশের সেবা করা – অবৈধ, অসৎ ভাবে টাকা উপার্জন নয়।
সারজিস আলমের গাড়ী শোভাযাত্রা এবং ওর বক্তব্যে আমি হতাশ। ও যদি নির্বাচনে হারে তবে এই কারণে হারবে যদি না সে তার ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে না পারে এবং ভবিষ্যতে সৎভাবে রাজনীতি করতে না পারে।
রাজনীতিতে পুরনো বিএনপির কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। ডঃ ইউনুস স্যার অনেকবার বলেছে – নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর বা জুন এর মধ্যে হবে। ওরা প্রতিদিন শুধু নির্বাচন নির্বাচন বলে – আরে বাবা অন্তত ১ সপ্তাহ পর পর বলেন। এক কথা প্রতিদিন শুনতে জনগণের বিরক্ত লাগে। আমি আমার FB তে ২১.১১.২৪ বাংলাদেশের সব নির্বাচনের ফলাফল দিয়েছি। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় ২৬ এর জুন এ নির্বাচন হলেও বিএনপিই ক্ষমতায় যাবে। কিছু করতে হবে না – নিজেদের সংশোধন করুন – ভালো কাজ করুন। আল্লাহ বলেছেন ভালো কাজের জন্য প্রতিযোগিতা করতে, খারাপ কাজের জন্য নয়।
সব রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ভালোর জন্য কাজ করুন। অন্যদের নামে মিথ্যা বলা, অর্থনৈতিক অসততা বর্জন করুন।
দেখবেন বাংলাদেশ একটা সমৃদ্ধিশীল ও শান্তির দেশ হওয়া কিছু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।