শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
spot_img

আমরা ব্যর্থ হলে আমাদেরও লজ্জিত হওয়া উচিত : আসিফ নজরুল

 

- Advertisement -

রবার্ট ব্রাউনিংয়ের ‘দ্য প্যাট্রিয়ট’ নামের একটা কবিতা আমরা পড়তাম নবম শ্রেণিতে। প্যাট্রিয়ট বা দেশপ্রেমিক যুদ্ধনায়ক বীরের বেশে নগরীতে প্রবেশ করে। কিন্তু ভুল-বোঝাবুঝিতে তার পতন ঘটে নির্মমভাবে। মানুষের ধিক্কারে তার গ্লানিময় প্রস্থান হয় সেই নগরী থেকেই। ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোর যাত্রাপথে তার মনোলগই হচ্ছে ব্রাউনিংয়ের বিখ্যাত কবিতা ‘দ্য প্যাট্রিয়ট’।

এই কবিতা এখনো প্রাসঙ্গিক বিশ্বব্যাপী। প্যাট্রিয়টের সঙ্গে বহু বরেণ্য রাজনীতিকের মিল খুঁজে পাওয়া যায় বিভিন্ন সময়ে। তবে এর ঠিক উল্টোও যে হতে পারে কখনো, তার এক আশ্চর্য উপাখ্যান আমরা দেখলাম সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষের ছাত্রীদের নিপীড়নকারী হিসেবে নিন্দিত একজন ছাত্রলীগ নেত্রীকে (ইফফাত জাহান) মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে প্রবল বরেণ্য হয়ে উঠতে দেখি আমরা এতে। জুতার মালা, গণধাওয়া এবং বহিষ্কারে বহিষ্কারে জর্জরিত ছিলেন তিনি। আশ্চর্য দ্রুততায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁরই গলায় ওঠে ভারী ভারী গাদা ফুলের মালা। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এমনকি তাঁর সম্পর্কে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপর হয়ে ওঠেন দিন কয়েক আগের তাঁর শাস্তিদাতারা।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা, জুতার মালা দিয়ে লাঞ্ছিত করা-এ রকম বহু কিছু হয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অভিভাবক হিসেবে উপাচার্য বা অন্য কোনো দায়িত্বশীল শিক্ষক এ রকম ঘটনার পক্ষ হতে পারেন না। উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রধানতম দায়িত্ব ছাত্রছাত্রীদের (শিক্ষাঙ্গনে ও ছাত্রাবাসে) নিরাপত্তা বিধান করা এবং তাঁদের সম্মান রক্ষা করা। কোনো আন্দোলন বা বিরোধে তাঁদের ভূমিকা অস্বচ্ছ, প্রশ্নবিদ্ধ ও ভঙ্গুর হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের কাছে উপাচার্যকেই বরং ভীতিকর একজন মানুষ মনে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে আমাদেরও দায়িত্ব আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের, বিশেষ করে শিক্ষক সমিতিকে এর প্রতিবাদ করতে হবে। আমরা এটি করতে ব্যর্থ হলে আমাদেরও লজ্জিত হওয়া উচিত।

আসিফ নজরুল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক

সর্বশেষ