শুধু নিচের দিকে নয়,উপরের দিকেও শুদ্ধি অভিযান শুরু করুন : ড. মোশাররফ

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: চলমান ‘ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী’ অভিযান প্রসঙ্গে সরকারের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, শুধু নিচের দিকে নয়, উপরের দিকেও শুদ্ধি অভিযান শুরু করুন। শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, শুদ্ধি অভিযানের জন্য সরকার যদি আজকে আন্তরিক হন তাহলে বলব, শুধু নিচের দিকে এ অভিযান চালিয়ে লাভ হবে না। উপরের দিক থেকে শুদ্ধি অভিযান শুরু করুন। তাহলেই শুদ্ধি অভিযান সফল হবে। তা না হলে মানুষ আপনাদের এসব নাটককে লোক দেখানো বলবে, এই বিষয়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আপনাদের একটা কূটকৌশল হিসেবে মানুষ মনে করবে।

তিনি বলেন, যখন মানুষ বালিশ, পর্দা নিয়ে কথা তুলল তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন, এগুলো তো ছিঁচকে চোর। তারপরই দেখা গেলো- না আরো বড় চোর বেরিয়ে গেছে। আমরা মনে করি, এটা এখনো ছিঁচকে পর্যায়েই আছে। বড় চোরদের সহযোগিতা ছাড়া এ ছিঁচকে চোর হতে পারে না। অতএব বড়দের কারা এর সাথে-পেছনে জড়িত তাদের তালিকা জনগণ জানতে চায়। তাদেরকে গ্রেফতার করে আপনারা প্রমাণ করুন, আপনারা আন্তরিক।

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য আ স ম হান্নান শাহের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে আসম হান্নান শাহ স্মৃতি সংসদ। গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে এবং জেলা যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সবুজের পরিচালনায় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ^র চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, গাজীপুর জেলার নেতা আজিজুর রহমান পেয়ারা, শামীম, শাহ রিয়াজুল হান্নান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, তিনি বলেছেন, ৬০ জায়গায় ক্যাসিনো চলেছে, ৬০ থানার পুলিশ কী করেছে? ৬০ এলাকার র‌্যাব কী করেছে- তারা কী আঙ্গুল চুষেছে? এটা উনি সঠিক বলেছেন। সেখানে এসব প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া, সমর্থন ছাড়া, পাহারা ছাড়া এ ধরনের অনৈতিক কাজ চলতে পারে না। অতত্রব আমরাও দাবি করছি, তারা যেহেতু আঙ্গুল চুষেননি, সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে চিহ্নিত করুন। এ অবস্থার পরিবর্তনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।

আ স ম হান্নান শাহের ব্যাপারে বলেন, তিনি জাতীয়তাবাদের রাজনীতিতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পেছনের একজন অত্যন্ত বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন। ১/১১ তে আমরা তখন গ্রেফতারের পর জেলের অভ্যন্তরে অপেক্ষা করতাম, পরদিন হান্নান শাহের কথা শুনা যায় কি না। যখন এমন অবস্থা ছিল আমাদের সাবেক মহাসচিব সংস্কারের নামে দলকে বিভক্ত করছেন, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বিগ্রেডিয়ার হান্নান শাহ, গয়েশ্বর বাবু তারা তখন বীরোচিত ও সাহসী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তারপর আমাদের দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এই তিনজন সেই দুর্দিনে বিএনপির পতাকা সমুন্নত রেখেছিলেন। সেজন্য সেদিন বিএনপির বিরুদ্ধে সংস্কার নামক ষড়যন্ত্র টিকে থাকতে পারেনি। হান্নান শাহ দেশের জন্য এবং বিএনপির জন্য বিরাট অবদান রেখেছেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, শেষ সময়ে আ স ম হান্নান শাহ টাকার অভাবে ভুগছিলেন। হাসপাতালের বিল দেয়ার মতো অবস্থা তার ছিলো না। বিএনপির একজন বড় নেতা, যার হাসপাতালের বিল দেয়ার টাকা ছিলো না- এটাই বাস্তব। সেই টাকা আমাদের বিএনপিকে পরিশোধ করতে হয়েছে। অবৈধ টাকা তিনি আয় করেননি। বিএনপির নেতারাও অবৈধ কোনো টাকা কামাননি। আজ দেখেন, টোকাইদের পকেটে কতো টাকা? আওয়ামী লীগের টোকাইদের পকেটে কত টাকা? চোর যখন ধরা খায় গরীবের নাম কয়, রামের নাম কয়, সাপের নাম কয়। এই চোররা ধরা পড়ছে আর একেকদিন একেক জনের কথা কয়। আর বড় চোরাগুলো মাইকের সামনে বড় বড় কইরা বিএনপি নেতাদের কথা বলে। কোনো চোরা বলে অমুকের লোক, কোনো চোরা বলে তমুকের লোক। তিনি বলেন, যাদের কাছে টাকা ছিল তারা ধরা খেয়েছে। এখন ধরা খাওয়ার অপেক্ষায় যারা আছেন পুলিশ কিংবা র‌্যাব তাদেরকে না ধরলে সময় বেশি দূরে নাই- দেশের জনগণ তাদেরকে চিহ্নিত করেছে। জনগণই তাদেরকে ধরবে। সেদিন মাফ পাওয়া যাবে না।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিলম্বে হলেও আমরা এখন উপলব্ধি করছি, আদালতপাড়ায় ঘুরাঘুরি করে আমাদের ফয়সালা হবে না, আমরা আমাদের নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করতে পারবো না। রাজনীতির ঐতিহাসিক শর্ত হলো- আন্দোলন সংগ্রামের বিকল্প নাই। আদালতনির্ভর না হয়ে আমাদের রাজপথ নির্ভর হতে হবে। রাজনৈতিক নেতা বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার মতো মানুষের কোনো ঘটনার সিদ্ধান্ত কোনো আদালতনির্ভর হয় না। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে- উনি ভালো না মন্দ, দোষী না নির্দোষী।

সর্বশেষ