প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনেও ভোট ডাকাতি হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি বলছে-অবশেষে আজ চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপ-নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা নিজের কেরামতি অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছেন। আজো সিইসির তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম উপ-নির্বাচনে মহাভোট ডাকাতির ঐকান্তিক উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেছে। ভোট-সন্ত্রাসকে জাতীয় জীবনে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই সেই কে এম নুরুল হুদা। আজো চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট-লুটের রমরমা আয়োজন সম্পন্ন করেছেন তিনি।
সোমবার বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, হুদা কমিশন ভোট ডাকাতির বৈধতা দানের সিলমোহরে পরিণত হয়েছে। সিইসি সুষ্ঠু নির্বাচনের শত্রুপক্ষ। তিনি গণতন্ত্রের শত্রু। তিনি বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের সাথে শত্রুতামূলক আচরণ করেন। বিষাক্ত সাপকেও বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা যায় না। তিনি একদলীয় রাজনীতির মূঢ় বিশ্বাসের দ্বারা অনুপ্রাণিত।
রিজভী বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের আগের দিন বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে হুমকি-ধামকি, হামলা আর ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান করা হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থীর সমর্থক ও ভোটারদের প্রতিনিয়ত নিগৃহিত করা হয়েছে। প্রতিমূহুর্তে ধানের শীষের সমর্থক ও ভোটাররা হিংসার সম্মুক্ষীণ হয়েছেন। সারা আসন জুড়ে সর্বত্রই অত্যাচারের চিত্র ছিল একই রকম। ১৭০টির মধ্যে সকালবেলায় ১২০টি ভোটকেন্দ্র থেকে এবং পরে সকাল ১১টার মধ্যে সবকটি কেন্দ্র দখল করে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।
তিনি বলেন, বহিরাগতদের ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটের লাইন দেখানো হলেও ঐ এলাকার কোন ভোটারই ভোট দিতে পারেনি। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, যুবদল নেতা খোরশেদ ও রফিকের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তারা এখন হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। এমনকি বিএনপি’র বর্ষীয়ান নেতা ৮০ বছর বয়স্ক এ্যাডভোকেট ইসাহাকের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে তাকেও আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। এই ভোট সন্ত্রাস চলাকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এসব অপকর্মে সহায়তা করেছে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর কয়েকদিন আগে ঐ এলাকার আওয়ামী লীগের এক এমপি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে একাই কিভাবে কেন্দ্র দখল করেছিল, সেটি উল্লেখ করে একইভাবে এই উপ-নির্বাচনেও তাকে দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি সব কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী প্রার্থীকে বিজয়ী করবে, এধরণের ঘোষণা দিয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, এই আওয়ামী আমলে মানুষ ফেনী মার্কা নির্বাচন দেখেছে, এখন হুদা মার্কা নির্বাচন দেখছে। এরপরও মানুষ আর কি মার্কা নির্বাচন দেখবে সেটির প্রতীক্ষা করছে। সকল আমলের আওয়ামী সরকার ও শেখ হাসিনার ওপর গবেষণা করলে দেখা যাবে সেখানে হিংসা আর ভোট-লুটের গল্প ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবে না। শেষ বিচারে সবচেয়ে যা বিবেচ্য তা হলো-শেখ হাসিনা ও কে এম নুরুল হুদা সমমনোভাবাপন্ন। সুতরাং তাদের নেতৃত্বে ভোটের প্রসাধনী ছাড়া সুষ্ঠু ভোট কখনোই হবে না। সিইসি হিসেবে কে এম নুরুল হুদাকে বাছাই করা হয়েছে কেবলমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনকে গোরস্থানের স্থায়ী বাসিন্দা বানাতে।
রিজভী বলেন, ক্ষমতার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নিবিড়-নিবিষ্ট ধ্যানকে আরো বেশী মগ্ন করে তুলেছেন সিইসি কে এম নুরুল হুদা। শেখ হাসিনার উচ্চাভিলাষের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন নুরুল হুদা। ভোট-লুটের নির্বাচন শেষে আওয়ামী রাজন্যবর্গের মতোই সিইসি বলবেন-ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। সত্য ঘটনাকে মিথ্যা বলা আওয়ামী লীগের এই আদর্শিক ইশতেহার আত্মস্থ করেছেন সিইসি। কে এম নুরুল হুদার জন্যই আওয়ামী লীগ মিথ্যারাজ দীর্ঘায়িত করতে পারছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সাংস্কৃতিক অভিরুচি একই ধরণের। সেটি হলো-নিরস্ত্র ভোটারদেরকে অবৈধ ক্ষমতা প্রদর্শন। ভোট ডাকাতি, ভোট সন্ত্রাস, জালভোট, ভোট কেন্দ্র দখল ও অবৈধ অস্ত্রের আস্ফালনে আওয়ামী লীগের যে বিজয় নিশান উড়ে সেই নিশানে হাওয়া দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। ক্ষমতা ধরে রাখার বিকৃতি, লোভ, লালসা ও ভোট ডাকাতি শেখ হাসিনা এবং নুরুল হুদাকে একাকার করে রেখেছে। এখন জনমনে ভোট মানেই যে প্রহসন সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আজ চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগাম বার্তা দেয়া হলো কি না সেটি জনগণ সেটি জানতে চায়। চট্টগ্রাম-৮ আসনে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা আবারো ভোট ডাকাতির যে ঘৃণ্য নজীর স্থাপন করলো। আমি সেটির তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ দফতর সম্পাদক মোঃ মুনির হোসেন, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, ড্যাবের নেতা ডাঃ জাহেদুল কবির জাহিদ প্রমুখ।