জেলে পরিকল্পনা এসিডে জ্বালিয়ে দেয় লাশ

 

- Advertisement -

প্রিয়সংবাদ ডেস্ক :: জেলে বসেই গাজীপুরের পুলিশ সোর্স সাগরকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্থানীয় ৪ মাদককারবারি ও সন্ত্রাসী। সাগরকে তারা তাদের পথের কাটা মনে করত। জেল থেকে জামিনে বের হয়ে ১৬ অক্টোবর সাগরকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। লাশ যাতে চিনতে না পারে সেজন্য ওরা হত্যার পর লাশটি এসিড দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার ৪ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই ৪ দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করা হয়।

এরা হচ্ছেন- মো. লিটন (২৩), মো. শাহীন (২২), মো. শরীফুল ইসলাম (৩৮) ও মো. আরমান (১৯)। তাদের বাড়ি গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার বাহাদুরপুর ও ভাওরাইদ এলাকায়।

র‌্যাব-১ এর গাজীপুরের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে জানান, ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় নগরীর বাহাদুরপুর এলাকার বিল্লাল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার চরানীখলা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে সাগর মিয়া (১৮) নিখোঁজ হয়।

পরে ১৯ অক্টোবর দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর ন্যাশনাল পার্কের নান্দুয়াইন চাতুরাপাড়া এলাকায় নাফিজ গার্ডেনের পাশে ধানক্ষেত থেকে অজ্ঞাত হিসেবে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব এবং পুলিশ। পরে পুলিশ বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করে।

৫ নভেম্বর সাগরের পরিবারের লোকজন র‌্যাবের ক্যাম্পে এসে উদ্ধার লাশের গায়ের পোশাক, বেল্ট, পায়ের স্যান্ডেলের ছবি দেখে সাগরের লাশ শনাক্ত করে। পরে র‌্যাব প্রযুক্তির সহায়তায় চার আসামিকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তারা র‌্যাবের কাছে সাগর হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

র‌্যাব জানায়, আসামিরা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী। তারা আগেও বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে যায়। তারা মনে করেছিল, তাদের গ্রেফতারের পেছনে সাগরের হাত রয়েছে। পরে তারা জেলে বসেই সাগরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে।

১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় আসামিরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গাজীপুর মহানগরীর ভীমবাজার এলাকা থেকে সাগরকে নিয়ে একসঙ্গে চোলাইমদ পান করে। পরে রাত সোয়া ১১টার দিকে ইয়াবা দেয়ার কথা বলে লিটন এবং শাহীন সাগরকে মোটরসাইকেলে তুলে ন্যাশনাল পার্কের গহিনে নিয়ে যায়। আসামি শরীফুল ও আরমান রাস্তায় পাহারার দায়িত্ব পালন করে। পলাতক আসামি আমিরুল আগে থেকেই বনের মধ্যে চাকু এবং লাঠি নিয়ে অবস্থান করছিল।

সাগরকে নিয়ে লিটন এবং শাহীন বনের ভেতর পৌঁছামাত্র তারা তিনজন মিলে সাগরকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা সাগরকে গামছা দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে এবং শাহীন দুই পা, লিটন দুই হাত চেপে ধরে এবং আমিরুল সাগরকে জবাই করে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে।

মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ঘাতকরা লাশ ঘটনাস্থল থেকে ২০০ মিটার দূরে গাজীপুর মহানগরীর ন্যাশনাল পার্কের নান্দুয়াইন চাতুরাপাড়া এলাকার নাফিজ গার্ডেনের পশ্চিম পাশের দেয়াল সংলগ্ন খায়রুল মিয়ার ধানক্ষেতের ভেতর নিয়ে লাশ এসিড দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে ঘাতকরা তাদের শরীরে লেগে থাকা রক্ত ধুয়েমুছে আমিরুলের বাসায় দাওয়াত খেয়ে রাতেই যার যার বাসায় চলে যায়। আটক হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল।

র‌্যাব জানায়, সাগর হত্যা মামলার পলাতক আসামি এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অন্যান্য আলামত উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ