নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে কাজ করলে জুন-জুলাইয়ে নির্বাচন সম্ভব: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সঠিকভাবে কাজ করলে জুন-জুলাইয়ে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

- Advertisement -

সংস্কার করতে কত দিন সময় লাগবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। জুলাই আন্দোলনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শহীদ পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এই প্রশ্ন তুলেছেন।

আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের ভুবনমোহন পার্ক শহীদ মিনারে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী বলেন, ‘আজকে সংস্কারের কথা যাঁরা বলছেন, এই সংস্কার করতে কত দিন সময় লাগে? পুলিশ আচরণ করবে আইন অনুযায়ী। কোনো ক্ষমতাশালীর কথা সে শুনবে না। প্রতিষ্ঠান চলবে আইনের গতিতে। এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এটার জন্য কত দিন সময় লাগে?’বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এটা মার্চ মাস। নির্বাচনের জন্য গড়িমসি কেন? সরকার নির্বাচনের জন্য একটা মাস দিয়েছিল। বলেছিল ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। আবার শুনি কেউ কেউ বলছে—না, এই সময়ে নির্বাচন করা কঠিন। নির্বাচন তো করবে নির্বাচন কমিশন, সহায়তা করবে সরকার। আমরা আশা করি, সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করবে। কারণ, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি।’

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা কেন কঠিন—এই প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ‘এখনো ৯-১০ মাস সময় আছে। কেউ কেউ বলছেন, গণপরিষদ নির্বাচন করতে হবে। ভাই, আমরা তো এটা বুঝতে পারছি না। গণপরিষদ করতে হয় এ কারণে যে তার মাধ্যমে একটা সংবিধান রচনা করা হয়। আমাদের তো সংবিধান আছে। শেখ হাসিনা সংবিধানে অনেক ধরনের ফ্যাসিবাদী আইনকানুন যুক্ত করেছেন। কিন্তু এটা তো সংশোধনের বিধান আছে। অনেকবার সংশোধন হয়েছে। তো গণপরিষদ আসছে কেন? এই কথাগুলো বিভ্রান্তি তৈরি করছে।’আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরকার, তার পরে না স্থানীয় সরকার নির্বাচন। সংস্কার তো চলমান ধারা। এটা চলবে, যাতে কোনো দিন কোনো ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিতে না পারে। বাপেরই জন্ম হলো না, তো সন্তান জন্ম হবে কী করে? আগে জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’

ভারতের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘অবাক লাগে যে প্রায় দেখি ভারত আমেরিকায় গেলে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করে। ভারত আমেরিকার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করছে। আজকেও সংবাদপত্রে দেখলাম, ভারত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করছে। কেন? বাংলাদেশে সরকার নেই? এটি একটি স্বাধীন দেশ নয়? এর একটি স্বাধীন পতাকা আছে, জাতীয় সংগীত আছে। আপনি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র, আলাদা স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশ নিয়ে আপনার এত মাথাব্যথা কেন? বাংলাদেশ নিয়ে অন্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? আমার দেশে কী হচ্ছে না হচ্ছে, আমাদের সরকার আছে, জনগণ আছে, আইনকানুন আছে, তারা কথা বলবে। আপনারা কারা যে অন্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করবেন? আজ ভারত শেখ হাসিনার দোসরদের বাগানবাড়িতে পরিণত হয়েছে। কারণ, হাসিনার মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। ভারত যা চাইত, শেখ হাসিনা ভারতকে তা-ই দিয়ে দিতেন। এভাবে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেন।’বিএনপি কারও কাছে মাথানত করে না দাবি করে রিজভী বলেন, ‘বিএনপির জনসমর্থন দেখে শেখ হাসিনা ভয় পেতেন। তাঁর টার্গেটই ছিল বিএনপিকে ধ্বংস করা। কারণ, বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বলে, বিএনপি কারও কাছে মাথানত করে না, সে যত বড় দেশই হোক। কোনো প্রভুকে প্রভু বলে বিএনপি মানতে চায় না। এটাই হচ্ছে বিএনপির অপরাধ।’

রিজভী অভিযোগ করেন, ‘শেখ হাসিনা ছিলেন লুটেরা, একটা দস্যু দলের সর্দারনি। হিটলার ফ্যাসিস্ট ছিলেন, কিন্তু দেশপ্রেমও ছিল তাঁর। শেখ হাসিনা তাঁর কাছ থেকে ফ্যাসিস্ট হওয়া শিখেছিলেন, কিন্তু দেশপ্রেম শেখেননি। তাঁর আমলে কিসের আদালত, কিসের আইন, কিসের বিচার? শেখ হাসিনা যা বলতেন, তা-ই হতো। শেখ হাসিনা হচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের ওপরে। শেখ হাসিনা এমন ফ্যাসিস্ট যে তাঁর কথাই সব। আইন-আদালতে যা-ই লেখা থাক, শেষ কথা হচ্ছে শেখ হাসিনা। কোনো কিছুই তিনি মানতেন না। তিনি ছিলেন এমন ফ্যাসিস্ট।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আমরা বিএনপি পরিবারের সভাপতি আতিকুর রহমান রুমন। স্বাগত বক্তব্য দেন সদস্যসচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুন। আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা আবুল কাশেম, মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, আশরাফ উদ্দিন বকুল, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা প্রমুখ।

সর্বশেষ