spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

বছরে আয় হবে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা সাড়ে ৯শ কোটি টাকায় বিএসসির বহরে  যুক্ত হচ্ছে দুটি কার্গো জাহাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img

মো.মোক্তার হোসেন বাবু : বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে যুক্ত হচ্ছে দুটি কার্গো জাহাজ। নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ দুটি কিনছে বিএসসি। ইতোমধ্যে জাহাজ কিনতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। জাহাজ দুটির ধারণক্ষমতা ৫৫ থেকে ৬৬ হাজার টন ধারণক্ষমতার নতুন দুটি আধুনিক বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ। যা গেল ১২ আগস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বিএসসি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক।

- Advertisement -

তিনি বলেন, প্রথম জাহাজ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে এবং দ্বিতীয়টি নভেম্বর মাসে বিএসসির বহরে যুক্ত হবে। নতুন দুটি জাহাজের মাধ্যমে বছরে আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকা আয় হবে। পাশাপাশি দেশীয় নাবিকদের প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান এবং বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে।    ২০১৮ সালে চীন থেকে চারটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হলেও ঋণচুক্তির জটিলতায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর এক বছর আগে প্রথমবারের মতো বিএসসি নিজস্ব অর্থে দুটি জাহাজ ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০০ থেকে ৯৫০ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মোট ৮টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় করে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব জমা দেয়। কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নের পর যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি-র প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রতি জাহাজের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৩৮.৩৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা সরকারি প্রাক্কলিত মূল্যের তুলনায় ৪.৬০ শতাংশ কম। বাংলাদেশি মুদ্রায় জাহাজটির মূল্য প্রায় ৪৬৭ কোটি টাকা, দুইটির মোট মূল্য দাঁড়াবে ৯৩৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।   নতুন জাহাজগুলোর কারিগরি বৈশিষ্ট্য এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত— কন্ট্রা রোটেটিং প্রপেলার: জ্বালানি সাশ্রয় ও অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি।

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, নতুন দুটি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব জাহাজ যুক্ত হলে বিএসসির নিজস্ব পরিবহন সক্ষমতা ১ লাখ ২০ হাজার ডিডব্লিউটি বৃদ্ধি পাবে। এটি দেশের সমুদ্রবাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে। পাশাপাশি নাবিকদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে।দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ কম থাকার কারণে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে বাইরে। নতুন দুটি জাহাজ যুক্ত হলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক পতাকাবাহী জাহাজের মালিক ছিল বিএসসি। নব্বইয়ের দশকে বহরে ছিল ৩৪টি জাহাজ। তবে পুরনো জাহাজ, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং দুর্ঘটনার কারণে বহর সংকুচিত হয়। ২০১৮ সাল থেকে নতুন জাহাজ যুক্ত হওয়ার পর সংস্থা আবার লাভজনক অবস্থায় ফিরলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও অগ্নিকাণ্ডে কয়েকটি জাহাজ হারিয়ে বর্তমানে বহর নেমে এসেছে মাত্র পাঁচটিতে।বর্তমানে বিএসসির বহরে রয়েছে এমভি বাংলার জয়যাত্রা, এমভি বাংলার অর্জন, এমটি বাংলার অগ্রগতি, এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা এবং এমটি বাংলার অগ্রদূত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংস্থাটি সর্বোচ্চ ২৪৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা বার্ষিক মুনাফা অর্জন করেছে।

বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫৪ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) এখন নিজস্ব বহরে মাত্র পাঁচটি জাহাজ রেখে চালু আছে। ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করা বিএসসি তার প্রথম জাহাজ ‘বাংলার দূত’ যুক্ত করে। ১৯৭৩ সালে ‘বাংলার সম্পদ’ নামের আরেকটি জাহাজ সংযুক্ত হয়। এরপর থেকে মোট ৪৪টি জাহাজ সংগ্রহ করা হলেও বয়স এবং দুর্ঘটনার কারণে ২০২৪ সালের মধ্যে ৩৯টি জাহাজ বিক্রি করা হয়।গত বছরের অক্টোবরে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ৩৭ বছরের পুরনো এমটি বাংলার সৌরভ ও এমটি বাংলার জ্যোতি জাহাজ দুটি অগ্নিকাণ্ডে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে এই দুটি জাহাজ ৫৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হলে বিএসসির বহর নেমে আসে মাত্র পাঁচটিতে। বর্তমানে সংস্থার বহরে রয়েছে এমভি বাংলার জয়যাত্রা, এমভি বাংলার অর্জন, এমটি বাংলার অগ্রগতি, এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা এবং এমটি বাংলার অগ্রদূত।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিএসসি সর্বোচ্চ ২৪৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা বার্ষিক মুনাফা করেছে। এটি সংস্থাটির ৫৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফার মাইলফলক, যা আগের বছর ২৪৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার নিট মুনাফার তুলনায় সামান্য বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা এটিকে বিএসসির স্থিতিশীল কার্যক্রম এবং লাভজনক পরিচালনার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য)মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা,ইঞ্জি. নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) মোহাম্মদ ইউসুফ,সচিব আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহে দুল ইসলাম,মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন)সাজিয়া পারভীন,মো. আতাউর রহমান,মো. আহসান-উল-করিম,মো. আজমগীর।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ