spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ার আক্রান্ত ৪৩ শতাংশ রোগীর শরীরে ব্যথা

মো.মোক্তার হোসেন বাবু
spot_img

মো.মোক্তার হোসেন বাবু : চট্টগ্রামে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় নাজেহাল চট্টগ্রামের মানুষ। গত বছরের তুলনায় এবার এ রোগের প্রকোপ কয়েক গুণ বেশি। প্রতি মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মৃত্যুও হয়েছে ঘটি কয়েক।  এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভাইরাল জ্বর। ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়া এই অসুখে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এ অবস্থায় মশক নিধন ছাড়া সমাধান দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।

- Advertisement -

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশাবাহিত এই রোগ প্রতিরোধে মূল কাজ হলো মশক নিধন। পাশাপাশি অসুস্থদের সময়মতো চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। কারণ মৃতদের বেশিরভাগই শেষ সময়ে হাসপাতালে গেছেন, তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে-আক্রান্তদের তিন-চতুর্থাংশের বেশি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। বেশিরভাগ একাধিক হাড়ের জয়েন্টে তীব্র ব্যথায় ভুগেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি, আর গড় বয়স ৪৫ বছর। ফলে বিশেষ করে মধ্যবয়সী ও নারী জনগোষ্ঠী এ প্রাদুর্ভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জানা গেছে, গবেষণাটি চলতি বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস ধরে চালানো হয়। যেখানে মোট ১২০ জন রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গবেষণায় উঠে আসে, আক্রান্তদের মধ্যে ৮১ শতাংশেরও বেশি রোগীর জ্বর ছিল এবং ৭৩ শতাংশ রোগী ভুগেছেন একাধিক হাড়ের জয়েন্টে তীব্র ব্যথায়। যার কারণে হাঁটাচলা বা দৈনন্দিন কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রায় ৪৩ শতাংশ রোগীর শরীরে ব্যথা, ৩৫ শতাংশের গোড়ালিতে ফোলা ও ব্যথা এবং ৩৪ শতাংশের ফুসকুড়ি দেখা গেছে।

গবেষণায় দেখা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং পুরুষের সংখ্যা ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গড় বয়স পাওয়া গেছে ৪৫ দশমিক ৩৪ বছর। বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স ও জেন্ডারভিত্তিক এই প্রবণতা জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন করে সতর্কবার্তা।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের গবেষক ডা. রজত শংকর রায় বিশ্বাস, ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস, ডা. এম জালাল উদ্দিন এবং ডা. তাসলিমা কে লিমা এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন। গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘মেড আর্কাইভ’ প্ল্যাটফর্মে প্রি-প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। আর্টিকেলটি একটি স্বীকৃত পিয়ার রিভিউড জার্নালে জমা দেওয়া হয়েছে।

শুধু সাধারণ উপসর্গ নয়, কয়েকজন রোগীর ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে অস্বাভাবিক লক্ষণও। ত্বকে অচেনা র‌্যাশ, নাকের চারপাশে কালো দাগ, আলসার এবং সকালে হাত-পা ও শরীরের জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে যাওয়া ও ব্যথা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা। চিকিৎসকরা বলেন, এগুলো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি করছে।

এদিকে রক্ত পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশ রোগীর হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক থাকলেও সাদা রক্তকণিকার সংখ্যা কমে গেছে (লিউকোপেনিয়া) ১৮ শতাংশ রোগীর মধ্যে। নির্দিষ্ট ধরনের সাদা রক্তকণিকা কমে গেছে (নিউট্রোপেনিয়া) ১১ শতাংশ রোগীর মধ্যে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে (লিম্ফোপেনিয়া) ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ রোগীর মধ্যে।

অন্যদিকে, ৫ জন রোগীর ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু- দুই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বাড়তি ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। আর সহ-রোগের মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ বেশি পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের রোগীদের জন্য চিকুনগুনিয়া আরও জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

গবেষক দল জানান, এ প্রাদুর্ভাবে রোগীরা শুধু স্বল্পমেয়াদি কষ্টে ভুগছেন না, দীর্ঘমেয়াদে জোড়া ব্যথা ও পোস্ট-চিকুনগুনিয়া আথ্রাইটিসের মতো জটিলতা বাড়তে পারে। তাই দ্রুত শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি।

প্রধান গবেষক ডা. রজত শংকর রায় বিশ্বাস আরো বলেন, চিকুনগুনিয়া এবার অনেক বৈচিত্র্যময় উপসর্গ নিয়ে এসেছে। আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- সাধারণ জ্বর বা ব্যথার বাইরে ত্বক ও রক্তের অস্বাভাবিকতা বেশি নজরে এসেছে। এ জন্য চিকিৎসকদের আরও সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি জানান।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ