দীর্ঘ ১৯ বছর পর গতকাল সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কোন ধরণের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গতকাল দুপুরের পর তিনি নয়াপল্টনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তার আসার সংবাদ স্বল্প সময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের এলাকা থেকে বিএনপি নেতাকর্মী ও উৎসুক সাধারণ মানুষ তারেক রহমানকে দেখার জন্য ছুটে আসেন। এসময় তিনি রাস্তার দু’পাশে অপেক্ষমাণ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভ্যর্থনার জবাব দেন। পরে নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি সকলকে নতুন করে দেশ গঠনে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তিন ঘণ্টার বেশি সময় কার্যালয়ে অবস্থান করার পর তিনি গুলশানের বাসভবনে ফিরে যান। সর্বশেষ ২০০৬ সালে তারেক রহমান নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসেছিলেন। প্রায় ১৯ বছর পর গতকাল দলীয় কার্যালয়ে আসলেন তিনি।
গত ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর ৩০০ ফিটে গণঅভ্যর্থনা শেষে এভার কেয়ার হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। পরদিন ২৬ ডিসেম্বর শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান। ২৭ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত, আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ভোটার হন। একই দিনে তিনি ধানম-িতে শ্বশুর বাড়িতেবাড়িতে যান। ২৮ ডিসেম্বর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান তিনি। আর গতকাল আসেন নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
তারেক রহমান দুপুরের পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসবেন আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় বেলা সাড়ে ১২ টায়। সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা তিনটার দিকে তারেক রহমানের গাড়িবহর কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় অতিক্রম করে। যদিও তারেক রহমান আসছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অল্পসময়ের মধ্যেই নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তারেক রহমানের গাড়ীবহর আনন্দ কমিউনিটি সেন্টার অতিক্রম করার পর রাস্তার দু’পাশেই নেতাকর্মী ও সাধারণ উৎসুক জনতার ঢল নামে। সকলে তারেক রহমানের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান, তারেক রহমানও গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। এসময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে তারেক রহমানের গাড়ীবহর দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা। এই পুরো সময় তার গাড়িবহরকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষ শ্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তুলেন।
বিকেল ৪টা ৬ মিনিটে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছান তারেক রহমান। কার্যালয়ে পৌঁছালে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত ফুল দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অভ্যর্থনা জানান। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি কার্যালয়ে প্রবেশ করার পর রোডসাইডের বেলকনিতে আসেন। সেখান থেকে তিনি সড়কে অপেক্ষমাণ হাজার হাজার নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তাকে দেখে উপস্থিত সকলেই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেন। এসময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, আজ এখানে কোনো অনুষ্ঠান নেই। রাস্তা বন্ধ রাখলে সাধারণ মানুষের চলাফেরায় অসুবিধা হবে। তাই আমরা চেষ্টা করবো রাস্তাটি যত দ্রুত সম্ভব খুলে দেওয়ার জন্য, যেন সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, ইনশাআল্লাহ, আপনাদের সঙ্গে যখন কর্মসূচি দেবে, আমি বক্তব্য রাখবো। সবাই দোয়া করবেন। ইনশাআল্লাহ আমিও দোয়া করি যে সবাই সুস্থ ও ভালো থাকুন। আমাদের যার যতটুকু অবস্থান আছে, সেখান থেকে আসুন আমরা আমাদের দেশটাকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি। কোথাও যদি রাস্তায় এমনি কাগজ পড়ে থাকে, ময়লা হয়ে থাকে তখনই সেটাকে আমরা সরিয়ে দেবো। এভাবে ছোট ছোট কাজ করার মাধ্যমে দেশটাকে গড়ে তুলি। সকলে ভালো থাকবেন। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করবেন।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে দোতলায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা চেম্বারে যান তারেক রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসনের পাশেই এই কক্ষটি নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য।




