রাস্তায় গাড়ি নামানোর অপরাধে চালকের মুখে কালি

 

- Advertisement -

শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘন্টার ধর্মঘট চলছে। এই সময়ে রাস্তায় গাড়ি নামানোর অপরাধে চালকের মুখে কালি দিয়েছে শ্রমিকরা। রোববার সকালে রাজধানীর সায়দাবাদ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

নয়া দিগন্তের ক্যামেরায় ঘটনা ধরা পরার পর, চালক কোন কথা না বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। রোববার দিনভর এই ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। কোন কোন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে গ্লাসে কালি মেখে দেওয়া হয়েছে।

রোববার সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে শুরু হওয়া এ পরিবহন ধর্মঘটকে এরই মধ্যে ‘নৈরাজ্য’ উল্লেখ করে সমালোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। শাজাহান খান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি। এই সংগঠনটির ডাকেই সারা দেশে রোববার ও সোমবার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।

ধর্মঘট শুরুর প্রায় ছয় ঘণ্টা পর দুপুর ১২টার দিকে সচিবালয়ের নিজ দপ্তর থেকে বের হওয়ার সময় নৌমন্ত্রীকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। ধর্মঘটের ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবহন শ্রমিকদের এই নেতা বলেন, ‘এ আন্দোলন সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। যে বিষয়ে কিছু জানা নেই, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

‘আপনি শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতা। আপনি চাইলে পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলন ছেড়ে কাজে যোগ দেবে। শ্রমিকদের আপনি এ ধরনের কোনো নির্দেশ দেবেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করব না।’

এর পর সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলে শাজাহান খান সব প্রশ্নই এড়িয়ে যান।

যদিও শ্রমিকরা যে আট দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন, সেই দাবি এখনই পূরণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, ‘এই সরকারের হাতে যে সময় আছে, তাতে সড়ক পরিবহন আইনটি আর সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। শ্রমিক নেতারা আইনটি ভালোভাবে না পড়েই আন্দোলনে নেমেছেন।’

এর আগে অবশ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আইনটি সংশোধন করা বা শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘এ মুহূর্তে শুধু বলতে চাই, ধর্মঘট প্রত্যাহার করুন, মানুষকে কষ্ট দিয়ে কোনো লাভ নেই।’

রোববার ভোর ৬টা থেকে আট দফা দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ীতে কোনো গণপরিবহন চলতে দেখা যায়নি। যাত্রাবাড়ীতে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে ডেমরা থেকে আসা দুটি বাসের যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে বাস দুটির চাবি নিয়ে গেছেন শ্রমিকরা।

এদিকে, রাজধানীর অফিসগামী হাজার হাজার মানুষ হেঁটে চলছেন। বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রাইডশেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও-উবারের মোটরসাইকেলে করে গন্তব্যস্থলে যাচ্ছেন অনেকে।

মোটরসাইকেলের চালক, ব্যক্তিগত গাড়ির চালক কিংবা আরোহীদের মুখেও পোড়া মবিল মেখে দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তায় নামা শ্রমিকরা। এরই মধ্যে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সমালোচনাও হচ্ছে।

ধর্মঘটকারী শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—সড়ক দুর্ঘটনার সব অপরাধ জামিনযোগ্য করা, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল করা, সড়ক দুর্ঘটনায় গঠিত যেকোনো তদন্ত কমিটিতে ফেডারেশনের প্রতিনিধি রাখা, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি নির্ধারণ এবং সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা।

এর আগে গত ১২ অক্টোবর শ্রমিক ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেয়, সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারসহ আট দফা দাবি ২৭ অক্টোবরের মধ্যে পূরণ না হলে ২৮ অক্টোবর থেকে দুদিনের কর্মবিরতিতে যাবেন শ্রমিকরা।

সর্বশেষ