কালো কাচের গাড়িতে পাচার হচ্ছে ইয়াবা!

প্রিয়সংবাদ ডেস্কঃ উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে নিরাপদে ইয়াবা পাচার করছে দেশি-বিদেশী কতিপয় এনজিও সংস্থা। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর স্টিকারযুক্ত কালো কাচের গাড়ি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশির আওতামুক্ত থাকায় এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে একটি শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট। এনজিও কর্মীদের বহনে ব্যবহৃত গাড়ি থেকে ইতোমধ্যে কয়েক দফা ইয়াবা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

- Advertisement -

সুত্রে জানা গেছে, এনজিও গাড়ি তল্লাশিমুক্ত থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ঢুকে পড়ছে এনজিওতে। আর স্টিকারযুক্ত গাড়িতে চলছে রমরমা ইয়াবা পাচার। আবার কোন কোন ইয়াবা গডফাদার পাচারের জন্য নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে এনজিও কর্মীদের। দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী-পুরুষের বেশ কয়েকটি ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে এনজিও কর্মী হিসেবে। তারা কৌশলে এনজিও’র আইডি কার্ড সংগ্রহ করে তা গলায় ঝুলিয়ে সারা ক্যাম্প বিচরণ করলেও তাদের দেখার কেউ নেই। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইয়াবা পাচার করছে একটি চক্র। পাচার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নামি-দামী কালো গ্লাসের সব গাড়ি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রোহিঙ্গা শিবির থেকে ইয়াবা পাচারের সময় কক্সবাজারের মেরিনড্রাইভ সড়কে ধাওয়া করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের স্টিকারযুক্ত গাড়ি থেকে ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তবে রহস্যজনক কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনাটি প্রকাশ করতে অস্বীকার করে। পরে ওই গাড়ির চালককে আটক করা হয়।

এছাড়াও, ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর সকাল ৭টার দিকে টেকনাফ ডিগ্রি কলেজ এলাকায় একটি এনজিও সংস্থার স্টিকার লাগানো মাইক্রোবাস থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার ইয়াবাসহ চালককে আটক করে র‌্যাব-৭ এর একটি অভিযানিক দল। এই স্টিকারটি ছিল ‘ডিসিএ’ নামের একটি এনজিও’র। ওই মাইক্রোবাসে (ঢাকামেট্রো-চ-১৯-৬৩৫৫) বিশেষ কায়দায় ইয়াবা গুলো পাচার করছিলেন এনজিও সংস্থা ডিসিএ’র চালক মীর কাশেম। আটক মীর কাশেম মহেশখালী উপজেলার মিঠাছড়ি এলাকার মৃত আবু ছৈয়দের ছেলে। এ ঘটনায় মীর কাশেমের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড় থেকে ইয়াবাসহ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) নোহা গাড়ির চালককে আটক করেছিল পুলিশ। চালক সেলিম বগুড়া জেলার বাসিন্দা। এসময় ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-৮০৯৫ নম্বরের গাড়িটিও জব্দ করা হয়। এনজিও সংস্থা আইওএম’র সাথে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত নোহা গাড়ির চালক সেলিম ৩১৫ পিস ইয়াবা বিভিন্ন ল্যাপটপের পার্টসের মধ্যে ঢুকিয়ে সুকৌশলে পাচার করছিলেন বলে জানিয়েছিল পুলিশ। জানুয়ারী মাসে এনজিও সংস্থা আরটিএম ইন্টারন্যাশনালের ড্রাইভার বাদশা মিয়াকে উখিয়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৫ ইয়াবাসহ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।

গত ৬ এপ্রিল সকালে দমদমিয়া চেকপোস্টে ১০ হাজার ২৯ পিস ইয়াবাসহ লাকি শর্মা নামে এক এনজিও কর্মীকে আটক করে বিজিবি। কক্সবাজারগামী একটি স্পেশাল বাসের যাত্রী ছিলেন ওই নারী। দীর্ঘদিন ধরে ধৃত ওই নারী ‘শেড’সহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থায় কমর্রর ছিল। সর্বশেষ তিনি (লাকি শর্মা) টেকনাফে গণস্বাস্থ্য নামে একটি এনজিও সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। লাকি শর্মা টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ডেইল পাড়া এলাকার প্রবাস কান্তি দাশের স্ত্রী।

এদিকে, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত এনজিওতে গাড়ি ভাড়া দিচ্ছে। তাদের মূল টার্গেট হল ইয়াবা পাচার। এনজিওর স্টিকার থাকায় প্রশাসন গাড়ি তল্লাশি করে না। তাই ইয়াবা পাচারে কোন ধরণের অসুবিধাও হয় না। এমন ব্যবসায়ীও রয়েছেন যিনি একাই দেড় শতাধিক গাড়ি রোহিঙ্গা শিবিরে ভাড়া দিয়েছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবা পাচারের বিষয়ে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, যেসব রোহিঙ্গাদের সাথে মিয়ানমারের বিজিপি ও রাখাইন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা ছিল তাদের হাত ধরে এখনো মিয়ানমার থেকে কৌশলে ইয়াবা আসছে। ইয়াবা পাচারকারী রোহিঙ্গা চক্রটি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে স্থায়ীভাবে ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে ইয়াবা মজুদ করে। পরে বস্তি কেন্দ্রিক ইয়াবা সিন্ডিকেটের যোগসাজশে সুযোগ বুঝে এনজিও সংস্থার স্টিকারযুক্ত নামি-দামি গাড়ির মাধ্যমে পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেয় ইয়াবার চালান।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাস সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘চেকপোস্টে তল্লাশি আওতার বাইরে রাখার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এনজিওর গাড়িতে ইয়াবা পাচার হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু এনজিও সংস্থার গাড়ি ইয়াবা পাচারে জড়িত রয়েছে। এনজিও সংস্থার স্টিকারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। যার কারণে বেশিরভাগ ইয়াবা পাচারকারী চক্র পার পেয়ে যাচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি এনজিও কর্মী ইয়াবাসহ গাড়িতে ধরা পড়ছে। কিন্তু এখানে রাঘব বোয়ালরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এনজিও কর্মী ছদ্মবেশে অচেনা পুরুষ-মহিলারা বেপরোয়াভাবে ইয়াবা পাচার করে আসছে এমন তথ্যও রয়েছে। এসব ইয়াবার বেশি ভাগ যোগান দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা সিন্ডিকেট রয়েছে। এসব সিন্ডিকেটে কিছু এনজিও কর্মী ও গাড়ির চালক জড়িত। এনজিও’র আড়ালে ইয়াবা পাচার রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর সিপিএসসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। তার একটি হচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত এনজিও সংস্থার গাড়ি। ইতোমধ্যে র‌্যাব এনজিওর স্টিকারযুক্ত গাড়ী থেকে কয়েকটি ইয়াবার চালানো উদ্ধার করেছে। কিন্তু কোন না কোনভাবে পাচারকারী চক্র পালিয়ে যাচ্ছে। তবে র‌্যাব আরও বেশি সতর্কতা জারি করেছে এসব গাড়ির দিকে।’

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ বলেন, ‘জাতিসংঘ ভিত্তিক এনজিওর গাড়ি তল্লাশি করা যাচ্ছে না। কারণ সেটি উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা রয়েছে। তবে বাকি এনজিওগুলোর গাড়ি নিয়মিত তল্লাশি করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ