spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

পোশাক কারখানায় ছাঁটাই বন্ধে প্রধানমন্ত্রীকে এএএফএ’র চিঠি

spot_img

 

- Advertisement -

বাংলাদেশে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অপরাধের অভিযোগ ও দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ও পাদুকা খাতের প্রভাবশালী সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়ার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ)। একইসঙ্গে এ ধরনের অভিযোগে সেসব কর্মীকে বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে তাদের পুনর্বহালে উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। শুক্রবার (২৪ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে লেখা চিঠিতে এসব আহ্বান জানান এএএফএ’র সিইও রিক হেলফেনবেইন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা ওই চিঠিতে গার্মেন্ট, ফুটওয়ার ও ভ্রমণ পণ্য খাতে কর্মরত ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেছে এএএএফএ। তবে একইসঙ্গে এসব শ্রমিক বর্তমানে ছাঁটাইসহ যে ধরনের হয়রানির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে বলে সরকারকে হুঁশিয়ারিও করে দিয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে,বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা অফুরন্ত। তবে এ বছরের শুরুতে পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি দাবির বিক্ষোভের পর এ বিষয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ধরন পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তাকে উদ্বেগের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

চিঠিতে দাবি করা হয়, শ্রমিকদের দাবির মুখে বাংলাদেশ সরকার খুব দ্রুত সাড়া দিয়ে নতুন মজুরি কাঠামোর ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের যে উদ্যোগ নিয়েছিল তা অত্যন্ত সাধুবাদযোগ্য। তবে মুদ্রার অপর পিঠে এই এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় কর্মীদের ওপর ভীষণ রুষ্ট হয় সরকার ও পোশাক কারখানার মালিকরা। ফলে বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন রকম হয়রানিমূলক মামলা দায়ের এবং অনেককেই কাজ থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। চিঠিতে দাবি করা হয়, ‘গণহারে এভাবে শ্রমিকদের ছাঁটাই এবং তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা ও অভিযোগ আনা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

প্রসঙ্গত: এএএফএ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক, ফুটওয়্যার এবং অন্যান্য সেলাইজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি ও তাদের সরবরাহকারীদের জাতীয় বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ববাজারে যার বিপুল প্রভাব রয়েছে। এক হাজারেরও বেশি গ্লোবাল ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্বকারী এই সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্রের চল্লিশ লাখেরও বেশি শ্রমিকদের পক্ষে রাজনৈতিক বক্তব্য রেখে আসছে।

চিঠিতে শ্রমিক স্বার্থ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ সীমাবদ্ধ থাকার সমালোচনার পাশাপাশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যেসব পশ্চিমা সংগঠন উদ্যোগ নিয়েছিল তাদেরও বাদ দেওয়ার কঠোর সমালোচনা করেন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সিইও রিক হেলফেনবেইন। তিনি সরকারকে তাদের উদ্যোগ দ্বিগুণ করার জন্য এসব বিষয়ে মধ্যস্থতার সুযোগ দিতে রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি) বা সংস্কার সমন্বয় কেন্দ্রকে বাংলাদেশের সব পোশাক কারখানা পরিদর্শনের সুযোগ দিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আরসিসি এর আগে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর সামান্য অংশই পরিদর্শনের সুযোগ পেয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বাস্তবে (শ্রমিক-মালিক) মধ্যস্থতার কোনও সুযোগই পায়নি। এই পরিস্থিতির পরিবির্তন খুবই জরুরি। খুবই দ্রুত তা করতে হবে, তা না হলে পোশাক খাত দেশের জন্য যে সুযোগ ও সম্ভাবনা বয়ে আনছে তা অচিরেই তছনছ হয়ে যেতে পারে।

চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক শিল্পের দেশ বাংলাদেশ। এখানে প্রায় চার হাজার কারখানায় কর্মরত রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ পোশাককর্মী। প্রতিবছর তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থের পোশাক রফতানি হয়ে থাকে। এসব কাপড়ের মূল ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। তবে কিছুদিন পরপরই বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কম মজুরি দেওয়ার অভিযোগ আন্তর্জাতিক শিরোনামে উঠে আসছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর পশ্চিমা ক্রেতাদের দুটো জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স এর পরিদর্শনের পর দেশের ২ হাজার ৩০০ পোশাক কারখানায় রাতারাতি কর্ম পরিবেশ উন্নত হয়। এছাড়াও পাঁচ বছর আগে যেখানে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে বছরে গড়ে ৭১ জন মারা যেতেন সে সংখ্যা কমে এখন ১৭তে নেমে এসেছে। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার এখন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছে এ কাজে গঠিত জাতীয় পর্যবেক্ষণ কমিটিই পোশাক কারখানাগুলোর কর্ম পরিবেশ উন্নত করার কাজটি দায়িত্ব নিয়ে করতে পারবে, এজন্য আর আন্তর্জাতিক কোনও সংস্থা বা সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা নেই।

অন্যদিকে, রুবানা হককে লেখা পৃথক চিঠিতে বিজিএমএইএ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় তাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তার নেতৃত্বে সংগঠন সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন আমেরিকান অ্যাপারেলস ও ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সিইও রিক হেলফেনবেইন। পাশাপাশি ওই চিঠিতে এ বছরের জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণের যৌক্তিক দাবিতে যে আন্দোলন হয়ে ছিল তাতে অংশ নেওয়া বিভিন্ন পোশাক কারখানার অন্তত এক হাজার শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ও মালিকদের যোগসাজসে এদের অনেকের নামে বিভিন্ন মামলা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তাদের গ্রেফতার ও হয়রানি করছে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। চিঠিতে এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং কারখানাগুলো জাতীয় সমন্বয়কারী সংস্থার মাধ্যমে পরিদর্শন করানোর উদ্যোগ নিতে রুবানা হকের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ