বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে প্রায় তিনমাস ধরে রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে বন্দি অবস্থায় আছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি মুক্তি পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের মন খারাপ। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর প্রশ্ন উঠছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না। বিএনপি নেতারা এ বিষয়টি নিয়ে পরোক্ষভাবে খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। যদিও প্রকাশ্যে তারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবেন না।
বিএনপি নেতারা মুখে বলছেন খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবেন না, আবার তারা নির্বাচনে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কাছে বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছেন। তারা খুলনা এবং গাজীপুর সিটি নির্বাচনেও প্রার্থী দিয়েছেন। বিএনপি মুখে যাই বলুক নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের ওপর শরীকদের পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে।
বিএনপির একটি পক্ষ চাচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলবে। আর একটি পক্ষ চাচ্ছে তারা খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে খালেদাকে ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন। সব মিলিয়ে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কি না সে বিষয়টি গভীর মনোযোগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার দলকে আনতে তিনি কোনো উদ্যোগ নেবেন না। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপ চেয়ে আসছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোটের আগে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়া দরকার। পাশাপাশি দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাবন্দি খালেদার মুক্তিও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্ত দিয়েছে বিএনপি।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদার মুক্তির বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্র। কোন পার্টি নির্বাচন করবে, কোন পার্টি নির্বাচন করবে না, এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোর্ট রায় দিয়েছে। এখানে আমাদের কাছে দাবি করে তো কিছু হবে না। যেখানে কোর্ট রায় দিয়েছে, আইনগতভাবে যেহেতু কারাগারে গেছে। আইনগতভাবেই মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়ন করার পরও যদি জনগণ ভোট না দেয় তাহলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যাবে। ইলেকশনে জেতাটা আমি জনগণের ওপরেই ছেড়ে দিচ্ছি। জনগণ যদি মনে করে যে, তাদের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকুক, তারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবে।
আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবে নির্বাচন হবে। প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে, এ প্রক্রিয়া থেমে থাকবে না। বিএনপি আসবে না বলে নির্বাচনের ট্রেন থেমে যাবে এটা চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই ঘোষণা দিয়েছেন দশম সংসদ নির্বাচনের আগে যেভাবে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করে নির্বাচনকালীন সরকার করা হয়েছিল, এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও তাই করা হবে।
সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি নেতাদের সেই নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না- সেই প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, গতবার যাদের প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেখানে শুধু সরকারে অংশগ্রহণ নয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ও বিএনপিকে অফার করা হয়েছিল প্রকাশ্যে। এখানে গোপনীয়তার কিছু ছিল না। সেটা পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে।
পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী দল নয়- এমন কাউকে আমন্ত্রণ জানানোর কোনো চিন্তা-ভাবনা সরকারের নেই। সংবিধানে এমন কোনো সুযোগ আছে বলেও আমার জানা নেই।
এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, যে সমস্যা আছে, সেই সমস্যার সমাধান করেন। সংকটের সমাধান করেন। তারপর নির্বাচনে যান। কিছুই না করে যদি নির্বাচনে যান, তাহলে নির্বাচন কী হবে? যা হবার তাই হবে। যেটা করেছেন ২০১৪ সালে, তাই হবে।
ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এভাবে তো এবার নির্বাচন হবে না। কতবার জেলে দেবেন, কতজনকে মারবেন, কতজনকে গুম করবেন- করতে পারেন। এবার এই ধরনের নির্বাচন এদেশের মানুষ মেনে নেবে না। নির্বাচনকালীন ‘নিরপেক্ষ সরকার’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সংসদ ভেঙে দেওয়া ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব। সেইসঙ্গে তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান।
ইসির সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, সরকার এমন একটা মেরুদণ্ডবিহীন নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছে; আমি যখন তাদের ফোন করি তারা বলেন, ‘না না সব ঠিক আছে’। সূত্র : পরিবর্তন