জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে গতকাল রায় হয়নি। রায় জানা যাবে আজ। গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের অধিকতর শুনানি নিয়ে রায়ের জন্য বুধবার (আজ) দিন ধার্য করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে গত ৮ ও ৯ই মে উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে রায়ের জন্য ১৫ই মে (মঙ্গলবার) দিন ধার্য করেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, আব্দুর রেজাক খান, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, কায়সার কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এসময় উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির, মুরাদ রেজা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু, বিশ্বজিৎ দেবনাথ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবদিন ফারুক, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে জানান, তার কিছু সাবমিশন আছে যা তিনি বলতে চান। এজন্য একদিনের (বুধবার) সময়ের আর্জি জানান তিনি। আদালত শুনানির জন্য দুপুর ১২টা সময় নির্ধারণ করে দেন। পরে দুপুর ১২টা ৫ মিনিট থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তার বক্তব্য শেষে খালেদার অন্যতম আইনজীবী জয়নুল আবেদিন সংক্ষিপ্ত শুনানি করেন।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা, বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মো. নাছির উদ্দিন, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি নেতা মীর হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলা ও তাদের সাজার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থার সময় এদের সবাই বিচারিক আদালতে দণ্ডিত হয়েছিলেন। পরে হাইকোর্ট তাদের জামিন দিয়েছিল। আর তাদেরকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিষয়ে আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেনি একারণে যে, তারা সবাই ছিলেন গুরুতর অসুস্থ। তাদের জীবন ছিল সংকটাপন্ন। তাদের জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত চিকিৎসা সনদও তাদের ছিল। এছাড়া তারা দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। জীবনহানির আশঙ্কা না থাকলে এবং মেডিকেল বোর্ডের যথাযথ মতামত না থাকলে শুধুমাত্র অসুস্থতার যুক্তিতে জামিন দেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি আরো বলেন, ওইসব মামলায় আসামিদের জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মেডিকেল বোর্ডের যথাযথ মূল্যায়ন ও মতামত ছিল। কিন্তু এই মামলায় জামিন প্রশ্নে মেডিকেল বোর্ডের এ ধরনের যথাযথ কোনো মতামত বা মূল্যায়ন নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ওই সব মামলা আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার প্রেক্ষাপট ও অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই সব মামলায় রাষ্ট্রীয় আত্মসাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এই মামলায় সরকারি তহবিল আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। তখনকার প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে টাকা এসেছিল। সেই টাকা তুলে অন্য আরেকটি এতিম তহবিলে টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে এবং টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আর এই টাকা অন্য তহবিলে স্থানান্তরের অনুমতি দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এ মামলায় হাইকোর্টে জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে এসব অভিযোগ বিবেচনায় নেয়া হয়নি। নাজমুল হুদা, মোহাম্মদ নাসিম, হেলাল উদ্দিন ও টুকুর মামলায় আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ আদালতে তুলে ধরেন মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ৯০ কর্মদিবসে যদি আপিল শুনানি শেষ না হয়, আসামি যদি গুরুতর অসুস্থ হয় কিংবা মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে আর আসামির সাজা যদি তিন বছরের ঊর্ধ্বে না হয় তাহলে অসুস্থতাজনিত কারণে আসামি জামিন পেতে পারেন। কিন্তু এই মামলায় আসামির (খালেদা জিয়া) জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো যুক্তিও নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদিন দাঁড়ালে আদালত তাকে প্রশ্ন করেন তিনি (জয়নুল আবেদিন) কোনো রিপ্লাই (পাল্টা বক্তব্য) দেবেন কিনা। জয়নুল আবেদিন বলেন, আমরা পাল্টা বক্তব্য দেব না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমি যা পড়তে পারি নাই তা উনি পড়ে দিয়েছেন। ওইসব মামলায় আমরা শুধু উদাহরণ টেনেছি। কিন্তু আজ অ্যাটর্নি জেনারেল উপস্থাপন করেছেন, যা আমাদের পক্ষে গিয়েছে। এসময় একটি মামলার উদাহরণ উল্লেখ করে জয়নুল আবেদিন বলেন, ওই মামলার আসামিকে ৮ বছরের সাজা দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ আসামিকে জামিন দেয়। কিন্তু দুদক কোনো আপিল করেনি। কিন্তু এই মামলায় দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষ এক হয়ে গেছে। শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি রায়ের জন্য বুধবার দিন রাখেন।