spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

‘গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় শরিক হতে চাই না’

spot_img

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: ঢাকা সিটির দুই মেয়র ও কাউন্সিলরগণ যেন নগরবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতিভূ হতে পারেন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, নির্বাচন ভূলুন্ঠিত হলে গণতন্ত্রও লুন্ঠিত হয়ে যায়। আমরা গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় সামিল হতে চাই না। আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিগত তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। বুধবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুব তালুকদার তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের তিন বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। বাকি দু’বছর সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনকে নিয়ে রাজধানীবাসীর উৎসুক্য ও উদ্বেগ অন্তহীন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও জাতীয় নির্বাচনের মতোই এতে সমগ্র দেশবাসীর দৃষ্টি নিবন্ধ।

তিনি বলেন, অতীতে যে সকল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে, তাতে প্রথম দুটি নির্বাচন কুমিল্লা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমাদের সফলতা ছিল।
কিন্তু বেশীদিন ‘আপনার রূপে আপনি বিভোর’ থাকা হলো না। পরবর্তী পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তিনটির বিষয়ে আমি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি এককভাবে দায়িত্ব পালন করি এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে আমি প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে এই তিনটি নির্বাচনের স্বরূপ সন্ধান করি। কিন্তু এই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমার কাছে মোটেই সুখকর নয়। আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিগত ওই তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।

মাহবুব তালুকদার বলেন, কেন নির্বাচন নিরপেক্ষ শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হয় না? এ প্রশ্নের উত্তর আত্মজিজ্ঞাসার কারণেই আমাকে খুঁজতে হয়েছে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দী। এজন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হয়, তাহলে গণতন্ত্রের পদযাত্রা অবারিত করতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হতে হবে। অবৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনগণের প্রতি বা গণতন্ত্রের প্রতি কোনো কমিটমেন্ট থাকে না।

তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি কোন নিরাশার কথা শোনাতে চাই না। এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও অন্যান্য সহায়ক কর্মকর্তাগণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতা অর্জন করবেন, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেহেতু আপনারা সবাই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, সেহেতু আপনারা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতাবলে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় সকল অপশক্তিকে পরাজিত করে সাফল্যলাভ করবেন। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিতে আপনারা নিশ্চয়ই ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাবেন। এক্ষেত্রে আপনাদের শিথিলতাও সহ্য করা হবে না এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ঢাকার উভয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবারই সার্বিকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ইভিএম নিয়ে অংশীজনের অনেকের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্ধ রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা যদি সফলকাম হতে পারি, তাহলে পরবর্তীতে সর্বক্ষেত্রে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হলে নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। এজন্য ইভিএম-এ সতর্কতার সঙ্গে ভোট গ্রহণ করে ভোটারদের আস্থা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজধানীবাসীকে জনপ্রতিনিধি উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমান পর্যবেক্ষণে ধারণা হয়, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। সবাই অংশ নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার পথ সুগম হয় ও অনিয়মের পথ রুদ্ধ হয়। তাই এই নির্বাচনে ভোটারদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই। ভোটারদের বলি, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্রহরণকারীদের উপযুক্ত জবাব দিন। উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির সংকট ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারগণ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসবেন বলে আমার বিশ্বাস।

তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি, জাতীয় নির্বাচনের পরে উভয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসী এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। আপনারা সকল প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন। ঢাকা সিটির দুই মেয়র ও কাউন্সিলরগণ যেন নগরবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতিভূ হতে পারেন। নির্বাচন ভূলুন্ঠিত হলে গণতন্ত্রও লুন্ঠিত হয়ে যায়। আমরা গণতন্ত্রের শোকযাত্রায় সামিল হতে চাই না।

নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সকল কর্তৃত্ব এখন আপনাদের কাছে ন্যস্ত। আপনাদের অটুট মনোবল এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ পালনে দৃৃঢ় অঙ্গীকার আপনাদের আত্মমর্যাদারই পরিচায়ক। কারও ভয়-ভীতি বা কোনো প্রকার চাপের কাছে আপনারা নতি স্বীকার করবেন না। যে কোনো মূল্যে আইনানুগভাবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সফল করতে হবে। আমি আশা করি নির্বাচনের সর্বপ্রকার শৈত্যপ্রবাহ কাটিয়ে নূতন বছরে আপনারা রাজধানীবাসীর মনে উষ্ণতা ছড়াতে পারবেন। আমি আপনাদের সকলের কল্যাণ কামনা করি। সূত্র:: মানবজমিন

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ