প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: পঁচাত্তরের মতোই দেশে এখন ‘একদলীয় শাসন’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
তিনি বলেন, এ দেশে আজকে যা চলছে একদলীয় শাসন। ১৯৭৫ সালের একদলীয় শাসনের চিন্তা-ধ্যান-ধারণা এখন চলছে। ওই সময়ে যেমন কোনো রাজনীতি ছিল না, এখনও দেশে কোনো রাজনীতি নেই। এখন কোনো কার্যকর সংসদ নেই, আইনের শাসন নেই। বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই।
শনিবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংসদে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রতিষ্ঠার দিবসে বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, ১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধন করে আনুষ্ঠানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল। ঠিক এখন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এবং সুকৌশলে সেই একই ব্যবস্থা অনানুষ্ঠানিকভাবে চলছে। গণতন্ত্রের আবরণে দেশে স্বৈরতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদের আর্ভিভাব ঘটিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবই তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, আজকের এই দিনে জাতির প্রত্যয় হল- দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল-মত-শ্রেণি, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, ছাত্র-যুবকসহ সব শ্রেণির মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে যেতে হবে। আমরা মনে করি মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার চেতনা এবং গণতন্ত্রের জয় অবশ্যম্ভাবী।
১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রবর্তনের পটভূমি তুলে ধরে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, সেদিন সংসদে বিনা বিতর্কে, বিনা আলোচনায় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বিল মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে পাস করিয়ে দেশের তখনকার প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির পদে শপথ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। এই দলের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ অর্থাৎ বাকশাল। এ দিনে বাকশালের জন্মদিন।
৭ নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লবে স্বাধীনতা ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আরোহণের মধ্য দিয়ে দেশে বহুদলীয় শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের বিষয়গুলো তুলে ধরেন মওদুদ আহমদ।
তিনি বলেন, শহীদ জিয়া ক্ষমতা আরোহণের পরপরই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে ’৭২ সালের সংবিধানের আলোকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সব মৌলিক অধিকারসহ সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনর্বহাল করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই (বাকশাল) ব্যবস্থা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করেছে। সেই গণতন্ত্র তারা ফিরে পেতে চায়। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব এখন বিএনপির ওপর জনগণ অর্পণ করেছে।
মওদুদ বলেন, একদলীয় শাসন থেকে শহীদ জিয়া কর্তৃক বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং পরবর্তিতে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করে গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া হয়েছিল। আজকে সেই গণতন্ত্র আমাদের নেই।
খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রাখার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তি একই সূত্রে গাঁথা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু ও শওকত মাহমুদ।