spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

রোজার শুরুতে হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা

spot_img

 

- Advertisement -

রোজা শুরুর আগের দিন প্রায় ৩২ হাজার টাকায় পুরো মাসের মুদিপণ্য কিনেছেন একটি প্রাইভেট ব্যাংকের কর্মকর্তা শামসুল আলম। এর মধ্যে রয়েছে ৫ কেজি ছোলা, ১০ কেজি পেঁয়াজ, ৫ কেজি রসুন, ৪ কেজি আদা, ১০ কেজি চিনি, ৫ কেজি মশুরের ডাল, ৩০ লিটার সয়াবিন তেল, ১০ কেজি পোলাওয়ের চাল, ২ কেজি চা-পাতা, ২০ কেজি গরুর গোশত, ৫ কেজি খাসির গোশত, ১২ কেজি ব্রয়লার মুরগি, ৪ হালি পাকিস্তানি জাতের কক মুরগি। কিনেছেন ২ কেজি লম্বা বেগুন, ৩ কেজি কাঁচামরিচ, ১ কেজি ধনেপাতা, ১ কেজি পুদিনা পাতা, ৫ কেজি শসা, ৩ কেজি গাজর, ৩ কেজি খেসারির ডাল, ৩ কেজি বেসন, ৫ কেজি খেজুরসহ ইফতার তৈরির বিভিন্ন সামগ্রী।

একসাথে এত বাজার করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রোজা-রমজানের দিন। প্রতিদিন বাজারে যাওয়া সম্ভব নয়। কিনতে তো হবেই। তাই একসাথে কিনে নিলাম।’ একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আলম সাহেব ভালো করেই জানেন, একসাথে এত পণ্য কেনার কারণে বাজারের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে এবং বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, একসাথে অধিক পরিমাণ পণ্য কেনার কারণে গরিব এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষতি হচ্ছে জানার পরও আলম সাহেবের অবিবেচনাপ্রসূত জবাব, ‘রোজা এলে দাম একটু বাড়বে, এটা তো জানা কথা।’

একসাথে পুরো রমজান মাসে বাজার করার মাধ্যমে আলম সাহেব যে নিজের এবং সমাজের অনেক বড় ক্ষতি করেছেন সেটি তিনি বুঝতে পেরেছেন গতকাল বাজারে গিয়ে। ঈদের আগের দিন তিনি প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ কিনেছেন ৫৮ টাকা দরে। ১০ কেজির দাম ৫৮০ টাকা। রাজধানীর খিলগাঁও বাজারে গিয়ে দেখেন এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা দরে। অর্থাৎ ১০ কেজিতে তিনি ঠকেছেন ১৬০ টাকা। সেদিন যদি তিনি ১০ কেজি না কিনে ২ কেজি কিনতেন তবে গতকাল বাকি ৮ কেজি কিনতে পারতেন প্রতি কেজি ১৬ টাকা কম দরে।

রোজার শুরুতে আলম সাহেব প্রতি কেজি চিনি কিনেছেন ৬৩ টাকা কেজিদরে। একই চিনি গতকাল বিক্রি হয় ৫৮ টাকায়। অর্থাৎ কেজিতে কমেছে ৫ টাকা। কেজিতে ৩০ টাকা কমে এক সপ্তাহ আগেকার ১২০ টাকার আমদানি করা রসুন গতকাল বিক্রি হয় ৯০ টাকায়। অর্থাৎ আলম সাহেব যদি সেদিন ৫ কেজি রসুন না কিনে এক কেজি কিনতেন তাহলে সাশ্রয় হতো ১২০ টাকা। রোজার আগের দিন ৫৫০ টাকাদরে যে ২০ কেজি গরুর গোশত তিনি কিনেছেন, গতকাল কেনা যাচ্ছিল ৪৫০ টাকাদরে। অর্থাৎ চোখের লোভ, অর্থের দাম্ভিকতা থেকে কেনা গরুর গোশত বাবদই তার ক্ষতি হয়েছে ২০০০ টাকা। যা গতকাল তিনি ক্ষোভের সাথে জানালেন, গত এক সপ্তাহে ওই গোশত থেকে এক টুকরাও খাওয়া হয়নি।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রচুর সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও রোজার শুরুতে অস্বাভাবিক চাহিদার সুযোগে ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগ পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এই সুযোগে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় হাজার কোটি টাকা। আলম সাহেবরা একসাথে অধিক পণ্য কেনার কারণে বর্তমানে বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা এখন বেশ কম। অথচ জোগান স্বাভাবিক। ফলস্বরূপ বেশির ভাগ পণ্যেরই দাম কমেছে। আগামী দিনগুলোতে এসব পণ্যের দাম আরো কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, রোজাকে উপলক্ষ করে এবার নিত্যপ্রয়োজনীয় চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, খেজুর, তেল, ডাল প্রভৃতির যে সংগ্রহ ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছেন তার বেশির ভাগই অবিক্রীত রয়ে গেছে। ফলে প্রতিযোগিতা করে দাম কমাচ্ছেন তারা। রোজার আগের দিন খুচরা বাজারে যে ছোলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল, গতকাল সেগুলো বিক্রি হয় ৬২ থেকে ৬৫ টাকা দরে। ১৬০ টাকায় উঠেছিল ব্রয়লার মুরগির কেজি। গতকাল একই মুরগি বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়।

রোজার আগের দিন ঢাকায় প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। গতকাল সে বেগুনই ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করেন একই বিক্রেতা। অপরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা এবং গ্রাহকদের পরিমিতিবোধের অভাবে এভাবে ২০০ টাকার ধনেপাতা ১০০ টাকা, ১০০ টাকার কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, ২০০ টাকার পুদিনা পাতা ১০০ টাকা, ১৪০ টাকার বেসন ৮০ টাকা, ১২০ টাকার মুড়ি ৯০ টাকা, ৪০০ টাকার খেজুর ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিশ্লেষকরা।

বাড়তি দামে পণ্য কিনে তখন বাড়তি দামে বিক্রি করেছেন জানিয়ে খিলগাঁও বাজারে মুদি দোকানি মামুন হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, রোজা এলে মানুষ কম খায় কিন্তু খিদা থাকে বেশি। তাই রোজার আগে বেশি বেশি করে কিনে নেয় এবং দাম বাড়ায়। এখন তারা ফ্রিজের খাবার খাচ্ছেন আর আমরা বাধ্য হচ্ছি কম দামে বিক্রি করতে। এখন আমরা কম দামে বাধ্য হলেও এসব পণ্য আমাদের বেশি দামে কেনা। চাহিদা কম থাকায় দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

মালিবাগ সুপার মার্কেটের সবজি বিক্রেতা সুমন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা দিনের মাল দিনে বিক্রি করি। কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রি করি। অধিকাংশ সবজির দাম কমতির দিকে জানিয়ে তিনি বলেন, কাঁকরোল বিক্রি করছি ৫০ টাকায়। তিন দিন আগে ছিল ৮০ টাকা। যে জালি কুমড়া ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন, সেটি রোজার আগের দিন বিক্রি করেছেন ৬০ টাকা। দোকানে গতকাল কচুমুখী ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা এবং টমেটো ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান সুমন।
তালতলা বাজারের মাছ বিক্রেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাছের কেজিতে গড়ে ৫০ টাকা কমেছে। মাঝারি আকারের প্রতি কেজি রুই ও কাতল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ও পাঙ্গাশ ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। তুলনামূলক কমেছে অন্যান্য মাছের দামও। নয়াদিগন্ত

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ