মো.মুক্তার হোসেন বাবু : অবশেষে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির জামিন মঞ্জুর করেছেন একটি আদালত। চাঁদা দাবি ও একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে মারধরের মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রে মো. শফি উদ্দিনের আদালত জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির জিম্মায় এবং প্রতি বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরার শর্ত সাপেক্ষে এ আদেশ দেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও নুরুল আজিম রনির আইনজীবী এড. ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফি উদ্দিনের আদালত আমার জিম্মায় এবং প্রতি বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরার শর্ত সাপেক্ষে রনিকে জামিন দিয়েছেন।
এদিকে রনি এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহ জামিনে ছিলেন বলে জানিয়েছে আদালত সূত্র। এর আগে গত ৪ জুন চকবাজার থানায় দায়ের করা বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খানকে মারধর ও চাঁদাদাবির মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে নুরুল আজিম রনিকে কারাগারে প্রেরণ করেন চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওসমান গণির আদালত।
গত ৪ জুন রনিকে কারাগারে পাঠানোর পর তার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বন্দর নগরীর চকবাজার এলাকার মতি টাওয়ার নামের একটি ভবনের পঞ্চম তলায় অবস্থিত বিজ্ঞান কলেজের এবছরের এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপথ সংগ্রহ করতে গেলে পাঁচ হাজার টাকা করে উন্নয়ন ফি দাবি করা হয় বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। ৩১ মার্চ বিজ্ঞান কলেজে অভিভাবকদের অবস্থানের মধ্যেই সামনে সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে খবর পেয়ে নিজ অনুসারীদের নিয়ে সেখানে যান রনি।
ওইদিন ‘উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে জাহেদ খানকে চেম্বারে প্রবেশ করানোর এক পর্যায়ে তার শরীরে আঘাত’ করার কথা স্বীকার করে পরে এক বিবৃতিতে এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন রনি। ৩১ মার্চের ওই ঘটনার পর সে রাতে নগরীর চকবাজার থানায় বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন রনি। এরপর ৪ এপ্রিল রাতে চকবাজার থানায় ছাত্রলীগ নেতা রনির বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকার চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেন জাহেদ খান। নগর ছাত্রলীগ নেতা রনি গত কয়েক বছর ধরেই নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্ধিত বেতন-ফি বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার আন্দোলনের কারণে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেতন ফি কমানো ও আদায় করা বর্ধিত টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের ৭ মে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া বোর্ড স্কুল কেন্দ্রের বাইরে থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল ও ১৫ রাউন্ড গুলি এবং একটি সিল ও নগদ ২৬ হাজার টাকাসহ রনিকে গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারিক হাকিম হারুন আর রশিদ তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। সেসময় ৫২ দিন পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে মুক্তি পান রনি। এছাড়া অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে পুলিশ। ওই দুই মামলা ছাড়াও নগরীর এমএ আজিজ আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষর ঘটনায়ও তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। এছাড়া নগরীর জিইসি মোড়ের একটি কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়াও রনির বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা করেন। রাশেদ মিয়াকে মারধরের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি চান রনি। এরপর ২০ এপ্রিল আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে অব্যাহতির ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সবশেষ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ শেয়ার করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় মানহানির অভিযোগে গত ১৬ মে রনির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন নগর ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য তানজিরুল হক চৌধুরী। এরপর ৩১ মে বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একটি মামলা করেন রনি।