সিরাজুল আলম টিপু : চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের দুই বছর মেয়াদী কমিটি পাঁচ বছর ছুঁই ছুঁই হতে চলেছে। দীর্ঘদিন নতুন কমিটি না হওয়ায় বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অনেক নেতাকর্মীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বর্তমানে কমিটি ছাড়াই চলছে সংগঠনের কার্যক্রম। আর এই কারণে লেগে আছে কলহ, কোন্দল, গৃহবিবাদ। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলেও ছাত্রদলের অভ্যন্তরে রেষারেষি আর দলাদলি কমেনি। রাজপথের আন্দোলেনে দেখা না গেলে পদ-পদবি পাওয়ার লড়াইয়ে তাদের জুড়ি নেই। এছাড়া মহানগর এবং জেলায় রাজপথে সক্রিয় ছিল এমন অনেক ছাত্রদল নেতা এখন কারাগারে। মিথ্যা মামলায় ঘরছাড়া অনেক ছাত্রদল নেতা।
অভিযোগ রয়েছে, আগের কমিটি গঠনের সময় ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। নেতাদের পছন্দের যারা, তাদের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়। আর এ কারণে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের রাজনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২০ জুলাই গাজী মো. সিরাজ উল্লাহকে সভাপতি আর বেলায়েত হোসেন বুলুকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করে দেওয়া অপূর্ণাঙ্গ কমিটিকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও ব্যর্থ হন তারা। নগর ছাত্রদলের ১১ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক এই কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা হয়েছিল। আর কমিটির ১১ জনের মধ্যে একজনের মত্যু ঘটেছে এবং আরেকজন পদত্যাগ করেন। এ অবস্থা সংগঠনকে চাঙা করতে কয়েক দিনের মধ্যে কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটির ঘোষণার আভাস পাওয়া গেছে। তবে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ছাত্রদলের চট্টগ্রাম নগরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শাখার নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে সাংগঠনিক সূত্রে জানা গেছে।
ত্যাগী নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাদের দিয়েই চলছে ছাত্রদল! ছাত্র সংগঠনটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদেই রয়েছেন বিএনপি নেতারা। তাদের অনেকেই চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি কমিটির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু ছাত্রদল নয়, নগর যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি-সম্পাদক পদেও রয়েছেন বিএনপি নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা বলছেন, এক নেতার একাধিক পদে দায়িত্ব পালন কোনো রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এমন প্রবণতায় নেতৃত্ব বিকাশের পথ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী সিরাজ উল্লাহ দায়িত্ব পালন করছেন নগর ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক পদেও রয়েছেন তিনি। নগরীর বাকলিয়া থানা ছাত্রদলের সভাপতি পদে দায়িত্বে থাকলেও স¤প্রতি ওই পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন এই বিএনপি নেতা। নগর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মঈনুদ্দিন মো. শহীদ নগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং নগর বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন বুলু দায়িত্ব পালন করছেন নগর ছাত্রদলের একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে। তবে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধ চলছে। ছাত্রনেতাদের কাঙ্খিত পদ দেওয়ার জন্য বিএনপি নেতারা যে যার মতো করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে সুপারিশ করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে গত শনিবার নগর ছাত্রদলসহ দেশের আরো একাধিক জেলা শাখার কমিটি ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কারাবন্দি রাজীব আহসান গত শনিবার জামিনে মুক্তি পাওয়ায় তাঁর সম্মতির জন্য কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়।
এদিকে নতুন কমিটি গঠন প্রসঙ্গে নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী মো. সিরাজ উলাহ বলেন, পুরাতন-নতুনের সমন্বয়ে কমিটি গঠন হওয়া উচিত। কেননা নেতৃত্ব দিতে হলে সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার একটা বিষয় রয়েছে। উঠতি বয়সের নতুন ছাত্রনেতাদের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা নেই। তাই ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের মধ্য থেকে একজনকে সভাপতি এবং নতুনদের মধ্য থেকে সাধারণ সম্পাদক করে আহŸায়ক কমিটি ঘোষণা হতে পারে।
নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি আন্দোলন এবং আগামী নির্বাচনকে ঘিরে নগরীতে ছাত্রদলকে সুসংগঠিত করা দরকার। এ লক্ষ্যে ছাত্রদলকে ঢেলে সাজানো দরকার।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নগর ছাত্রদলের নতুন কমিটির পদ প্রত্যাশী নেতাদের নাম ইতোমধ্যে কেন্দ্রে প্রস্তাব করেছেন বিএনপি নেতারা। এরমধ্যে সভাপতি পদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমর্থন করেছেন এইচ এম রাশেদকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুলাহ আল নোমানের সমর্থন রয়েছে জমির উদ্দিন নাহিদকে। নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন সমর্থন দিয়েছেন জসিম উদ্দিন চৌধুরীকে। জসিম উদ্দিন চৌধুরী নগর ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি পদে আছেন। জমির উদ্দিন নাহিদ রয়েছেন যুগ্ম সম্পাদক পদে। আর এইচ এম রাশেদ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন। এই চার ছাত্রনেতার বর্তমানে কারও ছাত্রত্বের বয়স না থাকলেও সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বিবেচনায় তাদের মধ্য থেকে একজনকে সভাপতি মনোনীত করা হবে বলে দলীয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। সাধারণ সম্পাদক পদে চারজন প্রত্যাশী নেতার নাম শোনা গেছে। এরা হলেন, জায়েদ বিন রশিদ, সালাউদ্দিন আলী, মহসিন কবির আপেল ও সামিয়াত আমিন জিসান। জায়েদ ও আপেল দুজনই আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারী। জিসান হলেন ডা. শাহাদাতের অনুসারী। আর সালাউদ্দিন আলী হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলালের অনুসারী।