মো.মুক্তার হোসেন বাবু: দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন-ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব বিভিন্ন কর্মকৌশল, দারিদ্র বিমোচনসহ সামাজিক সুরক্ষা ও অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই বাজেট ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বিষয়ে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন-জনপ্রশাসনের পরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নে কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গৃহ নির্মাণে ঋণ প্রদানসহ সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তা তহবিল ও নারী উন্নয়নে বিশেষ তহবিলের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বন্ড মার্কেট উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, রাজস্ব আদায়, ভ্যাট ব্যবস্থাপনা, আয়কর আইনসহ বিভিন্ন রেগুলেটরী রিফর্ম এসব খাতে উল্লেখ্য পরিবর্তন আনতে পারে। ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্পোরেট কর হার ২.৫০% হ্রাস করা হয়েছে যা ইতিবাচক। দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তৈরী পোষাক উৎপাদনে ও রপ্তানিতে নিয়োজিত করদাতার কর হার ১৫%, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে ১২.৫% এবং সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে ১২% এ খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। দেশে মোবাইল টেলিফোন সেট উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি এবং কম্পিউটার যন্ত্রপাতি ও উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি সুবিধা এ তথ্য প্রযুক্তি বিকাশে সাহায্য করবে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে মোটর সাইকেল উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি এই শিল্পের প্রসার এবং সাধারণ মানুষের যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। একইভাবে দেশে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার এর ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহত প্রদান করা উচিত। স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় এনার্জি ড্রিংকের উপর সম্পূরক শুল্ক ২৫% থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫% করা, তামাক পণ্যের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ % থেকে বৃদ্ধি করে ২৫% করা এসব পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করবে। সিরামিকের বাথটাব, শাওয়ার ইত্যাদি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৩০% করায় দেশীয় শিল্প উৎসাহিত হবে। পাটের ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্লাস্টিক ব্যাগ ও মোড়ক সামগ্রীর উপর ৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ক্যান্সার ও কিডনি জাতীয় রোগের প্রতিষেধক আমদানি, প্রতি কেজি ১০০ টাকা মুল্যমান পর্যন্ত পাউরুটি, বনরুটি, হাতে তৈরী বিস্কুট ও ১৫০ টাকা পর্যন্ত হাতে তৈরী কেক ও চপ্পল বা পাদুকার উপর ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
কৃষিখাতে প্রধান উপকরণ সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদিতে আমদানি শুল্ক অব্যাহত রাখা হয়েছে। একই সাথে চাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে ২৫% আমদানি শুল্ক ও ৩% রেগুলেটরী ডিউটি আরোপ করা হয়েছে যা কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক হবে। পাশাপাশি পোল্ট্রি ফিডের প্রয়োজনীয় উপকরণ, সয়াবিন অয়েল কেক/ফ্লাওয়ারে শুল্ক হার হ্রাস করে শূন্য এবং রেগুলেটরী ডিউটি ৫% ধরা হয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্য আহরনের ক্ষেত্রে ফিশিং নেট আমদানিতে শূল্ক প্রণোদনার প্রস্তাব আমরা স্বাগতঃ জানাই। ঔষধ শিল্পে অচও উৎপাদনে রাসায়নিক উপকরণে শুল্ক রেয়াত সুবিধা, টেক্সটাইল শিল্পে কাঁচামালে শুল্ক মওকূপ এবং ফিল্ড মিল্ক পাউডার আমদানিতে শুল্ক ১০% হ্রাস করা জনবান্ধব এবং একই সাথে ব্যবসাবান্ধব প্রস্তাব বলে আমরা মনেকরি। এ ছাড়া স্কুলের জন্য ডেডিকেটেড স্কুল বাস চালু করা এবং ১৬০০ থেকে ১৮০০ সিসি পর্যন্ত হাইব্রিড মোটরগাড়ির সম্পূরক শুল্ক ৪৫% থেকে ২০% এ হ্রাস করা যানজট নিরসনে ও পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করবে।
তবে ব্যক্তিখাতে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। মূলস্ফীতি বিবেচনা করে আমরা এই সীমা ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করার দাবী জানাচ্ছি। ব্যাংকিং এর পাশাপাশি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রেও কর্পোরেট কর হ্রাস করা জরুরী। লোকাল এলসি’র ক্ষেত্রে নতুন করে যে সোর্স টেক্স আরোপ করা হয়েছে আমরা তার তীব্র বিরোধিতা করছি। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস অনেকাংশে বেড়ে যাবে। আমরা পরিবেশ রক্ষায় পাট পণ্য উৎপাদনে বিশেষ প্রণোদনার প্রস্তাব করছি। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবার উপর ৪.৫ % এর পরিবর্তে ৫% মূসক এবং আমদানি ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে অগ্রিম মূসক ৪% এর পরিবর্তে ৫% নির্ধারণ পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলেও আমরা মনে করি। চেম্বার সভাপতি ইকনোমিক জোন ও বন্দরের সক্ষমতা বিবেচনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ৮ লেইন ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ চট্টগ্রামের সাথে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কন্টেইনারবাহী রেল যোগাযোগের উন্নয়নের লক্ষ্যে বাজেটে বিশেষ বরাদ্ধের অনুরোধ জানান এবং চলমান মেগা প্রজেক্টসমূহ যথাসময়ে বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।