মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
spot_img

চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার কারনে দুর্ভোগ চরমে

 

ভারি বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম মহানগরী এখন দুর্ভোগের জনপদে পরিণত হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে মানুষজন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নগরীর বিস্তীর্ণ সড়ক। নালা-নর্দমা, খাল ভরাট হয়ে উপচে পড়া পানি সময় মতো সরে না যাওয়ায় প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ অধ্যুষিত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যস্ততম এলাকায় দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। ঈদ পূর্ব বাণিজ্যিক কার্যক্রম গত ক’দিনের বৃষ্টিতে হয়েছে ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে চট্টগ্রাম মহানগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে নালা-খাল জলাশয় সংস্কার-নির্মাণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার যে মেগা প্রকল্প শুরু হওয়ার কথা বলা হয়েছে- তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে নগরীর বিভিন্ন সংস্থাকে সমন্বয় করে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির মেগা প্রকল্প চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হাতে নেওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও এই দায় নিজ কাঁধে নিতে চাইছে না বলে দৃশ্যমান হচ্ছে। চট্টগ্রামের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এবার জলাবদ্ধতাজনিত দুর্ভোগের দায় তার কাঁধে নেই বলে আভাস দিয়েছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি শুরু করতে পারেননি বলে নগরীর বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল- চট্টগ্রামে চলতি বছরের মে থেকে শুরু হওয়া মেগা প্রকল্পের কারণে জনগণ জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্ত থাকবেন।
নগরীতে এ বছরও জলাবদ্ধতা ও বর্ষণজনিত ক্ষতির শিকার অর্ধশত এলাকা। ফ্লাইওভার নির্মাণ, খাল ও নালা সংস্কারের কাজ সত্ত্বেও আরো নতুন নতুন এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এই সংকটের স্থায়ী শিকার এখন প্রবর্ত্তক মোড়। নতুন করে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আশেপাশের এলাকা। নাসিরাবাদ সিডিএ এভিনিউ দুই নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকার ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক এবং পাশাপাশি জিইসি মোড় চৌমোহনীর জিইসি কনভেনশন সেন্টার সংলগ্ন এলাকা জলাবদ্ধতার এক ভয়াবহ দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। গত কয়েকদিনে ভারি বর্ষণ রাতেই বেশি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল ও খাল-নালা উপচানো পানিতে নগরীর নিচু এলাকার অধিবাসীরা সীমাহীন কষ্টের শিকার হচ্ছেন। বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, চকবাজার, বহদ্দারহাট, খতিবেরহাট, হালিশহর, কাতালগঞ্জসহ নগরীর আরো অনেক নিচু এলাকায় বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি দোকানপাটেও ঢুকেছে পানি।
জলাবদ্ধতার শিকার এলাকাগুলোর জনসাধারণ জানান, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে ৩০/৩৫ বছর আগে নির্মিত বহুতল ভবনসমূহের একতলাগুলোর ৮০ শতাংশ এখন বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বহদ্দারহাট থেকে ইস্পাহানি বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের মুরাদপুর থেকে ২ নম্বর গেট এবং নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় অংশ পর্যন্ত নিচের রাস্তায় ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে না ওঠায় মাঝারি বৃষ্টিতেই পানি সরতে পারছে না। অন্যদিকে ফ্লাইওভারের পানির নির্গমন ব্যবস্থা এখনো চালু না করায় ফ্লাইওভারের উপর জমা পানিতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্ভোগ ও ঝুঁকি।
অপরদিকে পোর্ট কানেক্টিং সড়কজুড়ে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত থাকায় ভাঙা সড়কের বিড়ম্বনা সেখানে এবছরও আছে। সেই সঙ্গে আছে জলমগ্নতা। আগ্রাবাদে জোয়ারের সময় কোমর সমান পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণ শুরুর আগেই দৃশ্যমান ছিল।
ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ক পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, তিনি গত দুইদিন জলাবদ্ধতার কারণে ঘরের বাইরে যেতে পারছেন না। তার বাসা আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিকের ১২ নম্বর সড়কে।
বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ এবং চট্টগ্রামস্থ সাদার্ন ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। কাজেই এবারের বর্ষায় নগরবাসীর কোনো উপকার হবে না। আগামী বর্ষাতে হয়তো কিছু সুফল পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে গত চব্বিশ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৯৪ দশমিক ২ মিলিমিটার। আগামী চব্বিশ ঘণ্টায়ও ভারি বর্ষণেরও পূর্বাভাস ও পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। সমুদ্রে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা মঙ্গলবারও বহাল ছিল।

সর্বশেষ