যমুনার বুকে দ্রুত এগিয়ে চলছে দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ।বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।মোট ৫০টি পিলারের মধ্যে ৩৪টির কাজ চলছে
গত শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সেতুর পূর্ব প্রান্তে ৪৭ ও ৪৮ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে প্রথম সুপার স্ট্রাকচার স্টিল স্প্যান। চলছে দ্বিতীয়টি বসানোর কাজও।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল অংশে নদীর দুই পাড়ে দুটি প্যাকেজে দেশি-বিদেশি কর্মী-প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে। সেতুর মোট ৫০টি পিলারের মধ্যে ৩৪টির কাজ হচ্ছে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে আটটি পিলারের কাজ। এখন এগুলোর ওপর সুপার স্ট্রাকচার স্টিল স্প্যান বসানোর কাজ চলছে। বাকি পিলারের কাজ পরে হবে।
১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর এই সেতু দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাইকা।
সেতুটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছে সরকার। রেল বিভাগের তথ্য মতে, ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্র্যাকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু।
প্রকল্পটির পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, ২০২১ সালের মার্চে সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। রাতদিন চলছে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ। এখন পর্যন্ত রেল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন রেল সেতুটি নির্মিত হলে ডাবল লাইনে দ্রুত গতিতে মালবাহীসহ ৮৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ তৈরি হবে।
সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর।পরিদর্শনকালে তিনি জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর সমস্ত দৃষ্টি এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুতে। সেতুটি চালু হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
“উন্নত প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করায় ডাবল লাইনের এ সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে,” বলেন হুমায়ুন কবীর।