মো.মুক্তার হোসেন,বাবু : প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় চলছে চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি ম্যাক্স হসপিটাল।এই হসপিটালের বিরুদ্ধে রয়েছে ভুল চিকিৎসায় রোগী, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে গলাকাটা বাণিজ্য, ডিপ্লোমা সনদধারী নার্সের অনুপস্থিতি, সেবার নামে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা অভিযোগ। আর হসপিটাল হওয়া এ বিল্ডিংয়ের চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র অনুমতি রয়েছে আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে। নিজস্ব ডাক্তারের সংকট থাকায় অধিকাংশ সময় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভাড়াটে ডাক্তার দিয়ে মোবাইল ফোনে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনদের।
এদিকে ত্রুটিপূর্ণ লাইসেন্সে অদক্ষ-অনভিজ্ঞ ডাক্তার-নার্স দ্বারা পরিচালিত নগরের এই হাসপাতালকে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১ টা শুরু হওয়া অভিযান চলে বিকেল তিনটা পর্যন্ত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। অভিযানে সহযোগিতা করেন ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ডা. দেওয়ান মো. মেহেদি হাসান, ওষুধ প্রশাসন চট্টগ্রামের তত্ত¡াবধায়ক গুলশান জাহান প্রমুখ। অভিযানে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা ছাড়াও শতাধিক র্যাব অংশ নেন।
অভিযানকালে হাসপাতালটির রোগ নিরুপণ কেন্দ্র (ল্যাব), ফার্মেসিসহ বিভিন্ন বিভাগে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পান ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযান শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম ১৫ দিনের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ত্রæটি-অনিয়ম সংশোধনের নির্দেশ দেন ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম বলেন, দুই বছর আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আলোচিত ম্যাক্স হাসাপাতালের ফার্মেসির। ম্যাক্স হাসাপাতালের অষ্টম তলায় নিজস্ব ফার্মেসির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এত দিন লাইসেন্সবিহীন চলছিল।তিনি বলেন, হাসপাতালে অনুমোদিত ফার্মাসিস্ট নেই। ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেজিস্ট্রেশন নম্বরও নেই।
স¤প্রতি আড়াই বছর বয়সী শিশু রাইফা খান ভুল চিকিৎসা ও ডাক্তার-নার্সদের অদক্ষতা ও অবহেলায় এ হাসপাতালে মারা যায়। এরপর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পর্যবেক্ষণ এবং সিভিল সার্জন মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটিতে এ হাসপাতালের নানা অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম উঠে আসে।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানান, হসপিটালটি প্রতিষ্ঠার সময় আধুনিক প্রযুক্তিতে চিকিৎসা সেবার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল। তাই অল্প সময়ের মধ্যে এটি জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়। এক পর্যায়ে জনগণের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে শুরু করে গলাকাটা বাণিজ্য। একের পর এক প্রতারণার মাধ্যমে রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে প্রতারণায় লিপ্ত হতে থাকে। এই হসপিটালের সেবা নিয়ে নিঃস্ব হয়নি এমন মানুষ খুব কম আছে। এমনকি মারাত্মক ভুল চিকিৎসায় অনেকেই হারিয়েছেন তাদের স্বজনকে। এখানে ভাড়াটে চিকিৎসকদের কারণে রোগীরা সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হন।