নিজস্ব প্রতিবেদক:: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল গড়ে তুলে বিশেষজ্ঞসহ প্রয়োজনীয় লোকবল দিয়ে স্বল্প মূল্যে ডেঙ্গু রোগীদের রক্তপরীক্ষা ও চিকিৎসা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন
বুধবার (৬ নভেম্বর) মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল পরিদর্শন করে চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনারও ঘোষণা দেন মেয়র।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল গড়ে তোলা হবে। বিশেষজ্ঞসহ প্রয়োজনীয় লোকবল দিয়ে স্বল্প মূল্যে ডেঙ্গু রোগীদের রক্তপরীক্ষা ও চিকিৎসা দেয়া হবে। এছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাস্তাঘাট পরিদর্শন করব আমি। আমি আজ ইতোমধ্যে আলকরণে বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি৷ পরিচ্ছন্ন বা স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে আমাকে জানাবেন, আমি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিব। মশা মারতে এখন যেসব ঔষধ ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোও আমি যাচাই করব সেগুলো আসলে কাজ করছে কী না। প্রয়োজনে মশা নিয়ন্ত্রণে নতুন ঔষধ ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করব।
“একসময় নারী ও নবজাতক শিশুদের সেবায় মেমন হাসপাতালের চট্টগ্রামে আলাদা সুনাম ছিল। এখানে এসে চিকিৎসক ও রোগীদের সাথে কথা বলে বুঝলাম হাসপাতালে যন্ত্রপাতির ঘাটতি আছে। এই যন্ত্রপাতি গুলো সংগ্রহ করে এবং প্রয়োজনীয় লোকবল দিয়ে মেমন হাসপাতালকে ঢেলে সাজানো হবে। বন্দরটিলা হাসপাতাল, মোস্তফা হাকিম হাসপাতালসহ কর্পোরেশনের বেশ কিছু ভালো বড় হাসপাতাল রয়েছে এগুলো সংস্কার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা হবে।”
নিজের চিকিৎসা জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে খ্যাতনামা এই চিকিৎসক বলেন, আমি ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের নেতৃত্বে ছিলাম। রুগ্ন এই হাসপাতালটিকে আমি দায়িত্ব ছাড়ার সময় একটি ছয় তলা হাসপাতাল ভবন সহ সাড়ে তিন কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রেখে এসেছি। কখনো কোন ডক্টর কোন নার্স বা স্টাফ বলতে পারেনি যে তাদের বেতন বকেয়া ছিল। ইনশাল্লাহ আমার আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার বাস্তবায়ন করব।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করছে জানিয়ে এই বিষয়ে চট্টগ্রামের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন মেমন হাসপাতাল পরিদর্শনকালে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন।
মেয়র ডা. শাহাদাত জানান, স্বাস্থ্য খাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বার্ষিক প্রায় ২১ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, যা প্রতি মাসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এই খাতের উন্নয়নের জন্য সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে সেবা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রতিমাসে প্রায় এক লাখ রোগীকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে চসিক এর হাসপাতালগুলোতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে।
মেয়র আরো জানান, চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শনের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নজরদারি করবেন। ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ফগিং মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে এবং মেয়র নিজে উপস্থিত থেকে এর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
স্বাস্থ্যসেবায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, “বিশেষায়িত হাসপাতালের ঘাটতি মেটাতে চট্টগ্রামে কিডনি রোগীদের জন্য সাশ্রয়ী ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে আমার। এছাড়াও, বিশেষায়িত হাসপাতাল যেমন ট্রমা, নিউরোসার্জিক্যাল ও বার্ন হসপিটাল স্থাপন করার পরিকল্পনাও রয়েছে আমার।
অবশেষে, তিনি নগরবাসীকে ডেঙ্গু ও মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান এবং জানান যে, সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমকে আরও বেশি কার্যকর ও জনকল্যাণমুখী করতে
গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করে মেয়র বলেন, আপনারা চিন্তা করবেন না। ইনশাল্লাহ আমাকে আপনারা সবসময় আপনাদের পাশে পাবেন। যে কোন গঠনমূলক সমালোচনা আপনারা করবেন আমি এটা ওয়েলকাম জানাবো, যাতে করে আমরা সেটা শুধরাতে পারি, আমরা রেক্টিফিকেশন করতে পারি। ডেঙ্গুর ব্যাপারে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করুন। কারণ গণমাধ্যমের সহায়তা ছাড়া ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি সম্ভব নয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, প্রকৌশলী ইকবাল হোসেনসহ চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।