মো.মোক্তার হোসেন বাবু: পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জশনে জুলুসে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল।‘ইয়া নবী সালাম আলাইকা, ইয়া রাসুল সালাম আলাইকা’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো নগরী।শনিবার সকাল সোয়া ১০টায় নগরীর ষোলশহর আলমগীর খানকাহ থেকে এই জুলুস শুরু হয়। সিরিকোট দরবারে আলীয়া কাদেরিয়ার সাজ্জাদনশীন পীর সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ জুলুসের নেতৃত্ব দেন। এর আগে, ভোর থেকে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা মুরাদপুর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা প্রাঙ্গণে আসতে থাকেন। জুলুস শুরুর আগেই লাখ, লাখ মানুষের জমায়েতে লোকারণ্য হয়ে ওঠে মাদরাসার আশপাশের এলাকা।
এরপর মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বেস্টনির মধ্য দিয়ে সাবির শাহকে বহনকারী গাড়ি অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে থাকে নবীপ্রেমীদের মহামিছিল। নগরীর বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর, দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড় হয়ে পুনরায় একই রুটে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া ময়দানে গিয়ে মিলিত হন মুসল্লিরা। সেখানে মিলাদ মাহফিল ও যোহরের নামাজ শেষে মোনাজাত করা হয়। এতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও বিশ্ব শান্তির প্রার্থনা করা হয়। জুলুসে আরও উপস্থিত ছিলেন- শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ ও সৈয়্যদ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ্।
জুলুসকে কেন্দ্র করে সপ্তাহজুড়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে শোভা পাচ্ছে ঈদে মিলাদুন্নবীতে স্বাগত জানিয়ে তৈরি করা তোরণ। বর্ণিল আলোকসজ্জাও করা হয়।
মাইক ও সাউন্ডবক্সে হামদ, না’ত, গজলসহ নানা ধরনের ইসলামী গানে বন্দরনগরী জুড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এল রে দুনিয়ায়, এয়া নবী সালাম আলাইকা, তুমি সৃষ্টির সেরা নবী কামলিওয়ালা, সাহারাতে ফুটল রে ফুল রঙ্গিন’ এমন নানা গানে মাতোয়ারা হন অংশগ্রহণকারীরা। জুলুসে শরিয়ত সম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে ড্রাম সেট বাজানো, নারীর অংশগ্রহণ ও খাবার নিক্ষেপ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল।
মহানবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) জন্ম ও ওফাত দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে প্রতি বছর এদিনে আয়োজিত হয় জশনে জুলুস, যার আয়োজন করে আঞ্জুমানে আহমদিয়া রহমানিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট। লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এবারের ৫৪তম আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য শান্তি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ।
ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা হিসেবে খ্যাত এই আয়োজন এখন চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। ঈদে মিলাদুন্নবীর এতো বড় জুলুসের নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই। গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার জানান, ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল থেকে চট্টগ্রামে জশনে জুলুসের সূচনা হয়।