spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

চট্টগ্রামে কিশোরগ্যাংয়ের দাপট: নিয়ন্ত্রণহীন অপরাধে আতঙ্কে নগরবাসী

মো.মোক্তার হোসেন বাবু:
spot_img

মো.মোক্তার হোসেন বাবু: চট্টগ্রাম মহানগরে কিশোরগ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারি, সংঘর্ষ থেকে শুরু করে আধিপত্য বিস্তারের মতো ঘটনায় কিশোরদের সংশ্লিষ্টতা চোখে পড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র আতঙ্ক, আর অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা দিনদিন বাড়ছে।

- Advertisement -

নগরীর অলিগলি, বাসস্ট্যান্ড, স্কুলুকলেজের আশপাশ এমনকি জনবহুল সড়কেও এখন কিশোর অপরাধীদের সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা, সামাজিক অবক্ষয়, মাদকাসক্ত গোষ্ঠীর টান, সহজে দেশীয় অস্ত্র পাওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্যাং কালচারের প্রভাব এই পরিস্থিতিকে আরও প্রকট করে তুলেছে। নজরদারির অভাবে বেড়েছে দৌরাত্ম্য।
চট্টগ্রাম মহানগরে কিশোরগ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সংঘর্ষ, ছিনতাই, ভয়ভীতি দেখানো ও দলগত হামলার মতো ঘটনা ঘটছে। নগরীর একাধিক এলাকায় এসব কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্যে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

শহরের পাহাড়তলী, দেওয়ানহাট, হালিশহর, চকবাজার, বহদ্দারহাট, নয়াবাজার, আগ্রাবাদ, আন্দরকিল্লা, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, রাউজান, জিইসি, পাঁচলাইশ, ইপিজেড ও পতেঙ্গা এলাকায় কিশোর গ্যাং সক্রিয় থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতের অন্ধকারে নয়—এদের বেপরোয়া চলাফেরা এখন দিনের বেলাতেও প্রচণ্ডভাবে দৃশ্যমান।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব কিশোরদের হাতে থাকে দেশীয় অস্ত্র, কখনো শিরস্ত্রাণ, কখনো ধারালো অস্ত্র, আবার কখনো আধুনিক গ্যাজেট ব্যবহার করে তারা সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও আপলোড করে নিজেদের প্রভাব দেখায়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যক্তিগত বিরোধ, প্রেমঘটিত বিষয় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া—বিভিন্ন কারণে এদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ী ও পথচারীরা বলছেন, সন্ধ্যার পর অনেক এলাকায় আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। ছিনতাই, ইভটিজিং, তুলে নিয়ে যাওয়া, হুমকি দেওয়া—এসব কাজ কিশোরগ্যাং সদস্যরা অহরহ করছে। ফলে অভিভাবকরাও সন্তানদের নিয়ে চরম শঙ্কায় রয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে কিছু সদস্যকে আটক করলেও টেকসই উদ্যোগের অভাবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তারা আবারও মাঠে নেমে আসে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবারে অবহেলা, অসুস্থ বন্ধুমহল, মাদক এবং অনিয়ন্ত্রিত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার এ ধরনের অপরাধপ্রবণতার বড় কারণ।

নগরবাসীর দাবী—শুধু ধরপাকড় নয়, কিশোরদের পুনর্বাসন, পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তদারকি এবং এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিং জোরদার করতে না পারলে কিশোরগ্যাং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও নিয়মিত মনিটরিং না থাকার কারণে কিশোরগ্যাং ক্রমে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মহল্লাভিত্তিক গ্যাং সদস্যদের তালিকা প্রণয়ন কিংবা স্কুল কলেজ এলাকায় কার্যকর নজরদারি এখনো দৃশ্যমান নয়।

অপরদিকে, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ও প্রভাবশালী মহলের মদদে কিছু গ্যাং আরও সাহসী হয়ে উঠছে বলেও জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিপন্ন শিক্ষা পরিবেশ ও সামাজিক স্থিতি কিশোরগ্যাংয়ের সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে, ঝুঁকি থাকায় অনেক অভিভাবক সন্তানদের বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট বয়সেই অপরাধ জগতে প্রবেশ করলে অধিকাংশ কিশোর পরবর্তীতে ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।

অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, কিশোরগ্যাং নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।
প্রতিটি থানায় কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সেল গঠন,গ্যাং সদস্যদের তালিকা ও নিয়মিত নজরদারি মাদক ও অস্ত্রের উৎস চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করা। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের উচিত সন্তানের বন্ধু ও চলাফেরায় নজরদারি এবং মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা ও মানসিক সহায়তা ও সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব স্কুল পুলিশিং জোরদার কাউন্সেলিং ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো।

স্থানীয় সমাজ ও জনপ্রতিনিধি মহল্লা পর্যায়ে সচেতনতা ও নজরদারি দল গঠন গ্যাং কালচারবিরোধী প্রচারণা।
চট্টগ্রাম মহানগরীর নিরাপত্তা আজ বড় প্রশ্নের মুখে। কিশোরগ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে এখনই যৌথ পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নগরবাসীর একটাই প্রশ্ন—এই অনিয়ন্ত্রিত কিশোরগ্যাং কে থামাবে?

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ