একাদশ জাতীয় নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে আরও আগেই। বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণাও হয়ে গেছে।
দলটির তৃণমূলসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই।
নির্বাচনের দেড় মাসেরও কম সময় আছে হাতে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট (জোটের সম্প্রসারণ হয়ে এখন ২৩ দল) এখনও নির্বাচনে যাবে কি যাবে না তা স্পষ্ট করেনি।
এই যখন অবস্থা তখন আজ সন্ধ্যায় বৈঠকে বসছে ২০ দলীয় জোট। এর আগে বিকালে বসছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক। এই দুটি বৈঠকের পর রাতে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বৈঠক করবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে।
বিএনপির আজকের তিন দফা বৈঠক রাজনীতিতে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। এই বৈঠকগুলোতে নির্বাচনে গেলে বা না গেলে লাভ-ক্ষতি কী তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে।
বৈঠকগুলোতে যেসব মতামত উঠে আসবে সেগুলো নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেখা করবেন কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।
আলাপ হবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও। এরপরই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আসবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে দলটির জেষ্ঠ নেতারা কিছুটা দ্বিধাবিভক্ত। বড় একটি অংশ নির্বাচনে যেতে চাচ্ছেন।
অপর একটি অংশ ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত সাত দফা দাবি পূরণ না হলে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে।
বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের আলোকে সিদ্ধান্ত নেবে ২০ দলীয় জোট। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জোটের বেশিরভাগ দলই নির্বাচনে অংশ নেবে না।
নির্বাচনের অংশ নেয়ার পক্ষের বিএনপি নেতাদের যুক্তি হচ্ছে-এক দশক ধরে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বাইরে।
এবারও অংশ না নিলে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা কঠিন হয়ে যেতে পারে। অনেকে স্বতন্ত্র কিংবা অন্য প্লাটফর্মে গিয়ে নির্বাচন করতে পারে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী বিএনপির নিবন্ধনও বাতিল হয়ে যাবে। তখন দল আরও গভীর সংকটে পড়বে।
তাদের যুক্তি হচ্ছে, অবাধ নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এতে করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাই বেশি।
আর যদি ক্ষমতায় নাও আসা যায় তাহলে বড় সংখ্যক আসনে জয়ী হয়ে বিরোধী দলের দায়িত্ব নিয়ে সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যাবে।
তখন স্বাভাবিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এতে করে দলীয় নেত্রীকে মুক্তির আন্দোলন আরও বেগবান করা সম্ভব হবে।
তবে বিএনপি জোটে যারা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে তাদের মত হচ্ছে- সাত দফা দাবির কোনো দাবিই আজও সরকার মানে নি। দুই দফা সংলাপ করেও দৃশ্যমান কোনো ফল আসেনি।
এমতাবস্থায় বিএনপি জোট নির্বাচনে গিয়ে কি করবে?
নির্বাচনের সমতল ভূমি সৃষ্টি না হলে আর দলীয় নেত্রীকে জেলে রেখে নির্বাচনে অংশ নিলে ফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা।
এমতাবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি জোট সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেবে বলে মনে করছেন তারা।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না এমন প্রশ্নে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি অবশ্যই একাদশ নির্বাচনে অংশ নেবে। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে যাবে বিএনপি।
এর বিপরীত মত দিয়েছেন বিএনপির স্থাযী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, সাত দফার কোনো দাবিই সরকার মানে নি। এমতাবস্থায় বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া মানে সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেয়া।
জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার রাতেই ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হয়েছে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকও হয়েছে।
উভয় বৈঠক থেকে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে বিভক্ত মত উঠে আসে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বৃহস্পতিবার বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
‘তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকে ভালো-মন্দ বিশ্লেষণ হয়েছে। কী করা উচিত, কী করা উচিত না- এসব নিয়ে সবাই মতামত দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, বৈঠকে কেউ কেউ বলেছেন, সরকার তো তার জায়গা থেকে একটুকুও সরছে না। কিন্তু নির্বাচন করতে গেলে এখন আমরা অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন পাব না।
‘নেতাকর্মী গ্রেফতার এখনও অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনে গিয়ে সরকারকে বৈধতা দেয়া হবে। আবার কেউ বলেছেন, নির্বাচন না করলে দলের আরও ক্ষতি হতে পারে। তবে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু আলোচনা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।’
বৃহস্পতিবার গুলশান কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে শরিক দলগুলোর মধ্যে ১১টি দলের মতামত নেয়া হয়।
সূত্র জানায়, এর মধ্যে ১০টি শরিক দল নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দেয়। যদিও তারা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত বলে মনে করছে।
সেখানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বাকি ৯ দল তাদের মতামত জানানোর আগেই জোটের বৈঠক মুলতবি করা হয়।
জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সাত দফা দাবি ছিল। এর কোনোটিই প্রধানমন্ত্রী মানেননি। সরকারের যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের সদিচ্ছা থাকত, তাহলে তারা দাবিগুলো মেনে নিত।
‘কিন্তু এখন পর্যন্ত একদফা দাবিও মানা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, সংলাপের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। তা-ও তিনি দেননি।’
তিনি যদি তার বক্তব্যে ৭ দফা দাবির মৌলিক কিছু বিষয় মেনে নেন, তাহলে নির্বাচনে যাওয়ার পথ সুগম হতো। যুগান্তর