একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে আসন্ন দুই সিটি নির্বাচনে মাঠে নামছে বিএনপি। জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় দলটি। তবে ভোট কারচুুপির আশঙ্কাও আছে তাদের। এক্ষেত্রে দুটোতেই লাভ দেখছে বিএনপি। গাজীপুর ও খুলনায় বিজয়ী হলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন আরও ত্বরান্তিত হবে বলেও মনে করে দলের হাইকমান্ড। আবার ভোট ডাকাতি করে বিজয় ছিনিয়ে নিলেও তা নিয়ে আন্দোলন জোরদার করা হবে। পরবর্তীতে তা জাতীয় নির্বাচনের ইস্যু তৈরি করা হবে। তাই দুই সিটিকে বাঁচা-মরার লড়াই হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। তৃণমূল নেতা-কর্মীদেরও সেভাবেই দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুই সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়ভাবে নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয় কমিটিও করা হয়েছে। ২০-দলীয় জোটগতভাবেও পৃথক নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মোটামুটিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি দুটোতেই বিশাল ব্যবধানে জয়ী হবে। আমরা আশা করছি, সরকার দুই সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে। ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, দুই সিটিতেই তৃণমূল নেতা-কর্মীরা এখন আগের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। তা ছাড়া সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। জুলুম-নির্যাতন ও দমন-পীড়নের চিত্র জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। জাতীয় ইস্যুর সঙ্গে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি। বিএনপি চেয়ারপারসনের কারাবন্দীকেও সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না। সুতরাং এসব দাবিতে সাধারণ জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করা সহজ হবে। বিএনপি নেতারা জানান, তারা দুই সিটি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। তারা মনে করেন, একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলায় দণ্ডিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনে এর প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পাওয়া যাবে। খালেদা জিয়ার কারাবন্দী অবস্থায় দুই সিটিতে জয়ী হয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা। এটা ধরেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাবেন তারা। জানা যায়, গাজীপুরে এরই মধ্যে ৫৭ ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একটি করে নির্বাচনী কমিটি করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই একজন করে কেন্দ্রীয় নেতা ওই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে সমন্বয়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। ২০-দলীয় জোটগতভাবে গাজীপুরে জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারকে সমন্বয়ক ও এলডিপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমকে সদস্য সচিব করে পৃথক কমিটি করা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই সিটি নির্বাচন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অগ্নিপরীক্ষা। সুষ্ঠু ভোট হলে গাজীপুর ও খুলনায় গতবারের চেয়ে বেশি ভোটে জয়লাভ করবেন ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী। তবে ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা সে শঙ্কা আমাদের রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই ভোট নির্বাচন কমিশনের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। যদি সুষ্ঠু ভোট করতে তারা ব্যর্থ হয় তাও দেশবাসী দেখবে।’ একইভাবে খুলনা সিটিতে ৩১টি ওয়ার্ডে সমসংখ্যক কমিটি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। এরই মধ্যে তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনাকে আহ্বায়ক ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনিকে সদস্য সচিব করে একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। জোটের পক্ষ থেকে এনপিপি সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে আহ্বায়ক ও এনডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসাকে সদস্য সচিব করে পৃথক নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রতিটি কমিটিতেও বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে রাখা হয়েছে। দুই সিটিতে জোটের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব থেকে শুরু করে ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের দুই সিটি নির্বাচনে কাজ করার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় চরম ব্যর্থতা আর ফ্যাসিবাদী আচরণের বিরুদ্ধে গাজীপুর আর খুলনায় গণজোয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জোটের প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন