বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়েছে – আইডিসি-সিডিআই

বাংলাদেশের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও বিরোধী প্রার্থীর ওপর সহিংসতায় পূর্ণ ছিল বলে দাবি করে এ জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের ওপর যথাযথ চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে আইসিডি-ডিসিআই। এ বিষয়ে গত বুধবার তারা একটি প্রস্তাব পাশ করেছে।

- Advertisement -

এতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের নির্বাচনে কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা নানা অনিয়ম ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের সঙ্গে জড়িত ছিল। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে একটি একদলীয় রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করেছে। বেগম খালেদা জিয়াকে মানুষ ও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে উপরের নির্দেশে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনে নানা অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানালেও শেখ হাসিনা সরকার ও নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এতে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে না দেয়া, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করেছে সংস্থাটি।

কারাগারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে সিডিআই প্রতিনিধিদল দেখা করতে না দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ১৯৬১ সালে খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাটস ওয়ার্ল্ড ইউনিয়ন (ডব্লিউইউসিডি) নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি নিউ ইন্টারন্যাশনাল টিমস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস (ইইউসিডি), খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাট অর্গানাইজেশন অব আমেরিকা (সিডিওএ) এবং খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন অব সেন্ট্রাল ইউরোপের (সিডিসিই) উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি করা হয়। ১৯৯৯ সালে এটি বর্তমান নাম সেন্ট্রিস্ট ডেমোক্র্যাট ইন্টারন্যাশনাল গ্রহণ করে।

১৯৮৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবর্তনের পথ ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে মানবজাতির জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সংঘর্ষের সমাপ্তির পর নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর সৃষ্টি, গণতন্ত্রের সংগ্রাম এবং বিশ্বায়ন শুরু হয়। শান্তি, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সংহতিতে বসবাসের জন্য এই নতুন সহস্রাব্দটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় সম্প্রদায়ের সামনে নতুন সুযোগের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সিডিআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সিডিআই নির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কলম্বিয়ার আন্দ্রেস পাসস্ট্রা, সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কাজ করছেন স্পেনের অ্যান্টোনিও লোপেজে-ইস্তাররিজ। সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যে রয়েছেন পাবলো ক্যাসাদো (স্পেন), ভিক্টর ওরবান (হাঙ্গেরি), প্যাট্রিস ট্রোভোডা (সাও টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে), আমিন জামায়েল (লেবানন), জেনেস জাঞ্জা (স্লোভেনিয়া), এলমার ব্রক (জার্মানি), সিজার এমএআইএ (ব্রাজিল), হুয়ারি বেনারবা (আলজেরিয়া), ইরা সুস (কম্বোডিয়া), মারিও ডেভিড (পর্তুগাল), লরডেস ফ্লোরেস (পেরু), ইসাইয়া সামাকুভা (অ্যাঙ্গোলা), মার্কো আন্তোনিও অ্যাডাম কাস্টিলো (মেক্সিকো), মিলটন হেনরিকস (পানামা) ও আন্ডারস হেরান্দেজ (কিউবা)। সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ হলেন, হুয়ারি বেনারবা (আলজেরিয়া)

উল্লেখ্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২৯শে জুন ২০১৮ সালে সদস্য পদ লাভ করে

এসব অভিযোগ উল্লেখ করে আইসিডি-ডিসিআই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে।বাংলাদেশ সম্পর্কে নেয়া সিডিআইর প্রস্তাবে আলাদা করে ১০টি আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাংলাদেশের নির্বাচনে সংগঠিত হওয়া নানা অনিয়ম ও সহিংসতার যথাযথ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাৎক্ষণিক বার্তা পাঠানো। একইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অবস্থা পর্যালোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিতে ইইউর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইসিডি-ডিসিআই। সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকারকে গুম হওয়া বিরোধী নেতাকর্মী, অধিকারকর্মী ও নাগরিকদের ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের প্রতিনিধিদলকে কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে না দেয়ায় সরকারের নিন্দা জানিয়েছে সংস্থাটি। ঘোষণাপত্রে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিতে ইইউকে আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার কথাও বলা হয়েছে এই প্রস্তাবে। থাকা সর্বশেষ প্রস্তাবে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, সরকারদলীয় নেতা ও মন্ত্রীদের ওপর ইইউকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে আইসিডি-ডিসিআই।

সর্বশেষ