ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রোববার রাত থেকে সোমবার বিকালের মধ্যে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং খুলনা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এই ৭ জন হলেন- নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার ফাতেমা আক্তার (২১), খুলনার রূপসা উপজেলার খাজাডাঙ্গা গ্রামের সবজি বিক্রেতা মিজানুর রহমান (৪০), নেত্রকোনার কেন্দুয়ার আব্দুল লতিফের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৪০), একই জেলার দুর্গাপুরের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সেলিম হোসেন (২৭), কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার রাসেল মিয়া, ফরিদপুর সদরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের গোলডাঙ্গীচর গ্রামের শেখ শফিউদ্দিনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩৫) এবং পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার ফজলুর রহমানের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৮)।
ঢাকা
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, ফাতেমা আক্তার নামে ২১ বছর বয়সী এক তরুণী রোববার রাত দেড়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
গত রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেয়েটিকে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে এনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সে ছিল ব্লাড ক্যান্সারের রোগী। কয়েকদিন আগে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে।
আব্দুর রশিদ জানান, তার হাসপাতালে সোমবার পর্যন্ত মোট ৩৭১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। ডেঙ্গুতে ভুগে মিটফোর্ডে এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু হল।
খুলনা
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, মিজানুর বৃস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সোমবার সকাল ৭টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত খুলনায় এক বৃদ্ধাসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জেলার সিভিল সার্জন এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, খুলনায় সোমবার পর্যন্ত ৫৭৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮৯ জন, যাদের ২০ জন সোমবার এসেছেন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক লক্ষ্মীনারায়ণ মজুমদার জানান, নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে সেলিম হোসেন (২৭) নামের এক রোগী গত মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকালে তার মৃত্যু হয়।
আর আনোয়ার হোসেন (৪০) নামে আরেক ডেঙ্গু রোগী সোমবার ভোরে মারা যান, যিনি আগের দিন দুপুরে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার রাসেল মিয়া নামে একজন মারা যান।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. এবিএম সামসুজ্জামান জানান, জ্বরে আক্রান্ত সেলিমের শারীরিক অন্যান্য সমস্যাও ছিল। ফলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার রিপোর্টগুলো ঢাকা আইসিইআরডিতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ঈদের পর থেকে কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৬ জন ভর্তি হয়েছেন।
বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৭৪ জন। গত ২১ জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬০ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৮৩ জন।
ফরিদপুর
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা জানান, দেলোয়ার হোসেন (৩৫) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রোববার ভর্তি হন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
দেলোয়ারের বাবা শফিউদ্দিন শেখ বলেন, তার ছেলেকে প্রথমে ফরিদপুর সদর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।
দেলোয়ার ফরিদপুর শহরের পূর্বখাবাসপুর মসজিদের খাদেম হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৭ জন ভর্তি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ফরিদপুরের এ রোগে ভর্তি রয়েছে ৩৪৬ জন রোগী।
এ পর্যন্ত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয় ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হলো বলে কামদা প্রসাদ জানান।
বরিশাল
সোমবার দুপুরে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমাইয়া আক্তারের (১৮) মৃত্যু হয়েছে। সুমাইয়া দুমকী সরকারি জনতা কলেজের সকাকারী অধ্যাপক মো. ফজলুর রহমান সিদ্দীকীর মেয়ে। তার গ্রামের বাড়ি বাখেরগঞ্জ উপজেলার ধুধল এলকায়।
পরিবারের বরাত দিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন বলেন, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গেল বুধবার দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন সুমাইয়া আক্তার। সেখানে শারীরিক অবস্থান অবনতি হলে বৃহস্পতিবার তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে তার চিকিৎসা চলছিল। যুগান্তর