আবরার হত্যা; তোপের মুখে প্রভোস্টের পদত্যাগ

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে খুন করার প্রতিবাদে তৃতীয় দিনের মতো বুধবারও উত্তাল ছিল সারা দেশের শিক্ষাঙ্গন। বুয়েট, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

বুয়েট শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। ওই সমাবেশে আবরারের শেষমুহূর্তের মৃত্যু যন্ত্রণার মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়েছেন দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তখন খুনিদের ফাঁসির দাবিতে প্রকম্পিত করেন আকাশ-বাতাস। ওই সমাবেশ থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে খুনের বিচার, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ও বিভিন্ন সময়ে হলে হলে নির্যাতনকারীদের বুয়েট থেকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে আজীবন বহিষ্কার, ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি করেন আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশ শেষে বুয়েট শিক্ষার্থীরা পলাশী মোড় অবরোধ করে রেখেছিলেন। সকালে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চলছিল। শিক্ষার্থীদের এদিনের প্রতিবাদে বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে যোগ দিয়েছেন শিক্ষকরা। বুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি, বুয়েট অ্যালামনাই এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে কালো পতাকা মিছিল। হত্যার দায় নিয়ে ভিসিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন বুয়েটের শিক্ষকরা। পদত্যাগ না করলে অপসারণের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান তারা। বুয়েট অ্যালামনাই ভিসিকে অপসারণের দাবি করেছে। সকালে শিক্ষার্থীদের দাবি এবং সহকর্মীদের তীব্র সমালোচনার মুখে দুপুরে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির চার ঘণ্টাব্যাপী সভায় প্রভোস্ট অধ্যাপক জাফর ইকবাল খান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন।

সভা শেষ করে ৩ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমাবেশ গিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে। জানাজায় উপস্থিত না হলেও বুধবার পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের পাহারায় আবরারের কবর জিয়ারত করতে কুষ্টিয়ায় যান ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। সেখানে তিনি গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এদিকে সকালে শুরু হওয়া কর্মসূচি রাতে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বুধবারের মতো শেষ করা হয়। আজ সকাল ১০টা থেকে পুনরায় বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নামছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

এদিনও দেশের বিভিন্ন শহর এবং জেলা-উপজেলায়ও শোকাহত সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। সারা দেশের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশগুলো থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বলেছেন, এটা ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আবরার খুনে জড়িত সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ফাঁসির দাবি জানান তারা। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ সড়ক অবরোধ করে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশি বাধার খবর পাওয়া গেছে। প্রগতিশীল ছাত্র জোট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এক বিবৃতিতে খুনিদের বিচার চেয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে পুলিশ ও বুয়েট প্রশাসনের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন দাবি করেছে।

রোববার রাতে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে তাকে হত্যা করা হয়।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ : শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বুয়েট অ্যালামনাই- এই তিন পক্ষের পৃথক কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল বুয়েট ক্যাম্পাস। এ ছাড়া বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে আবরার হত্যার বিচার চেয়ে বুয়েটের সামনে সড়কে মিছিল করেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বুধবার সকাল থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মৌন মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টার কিছু পর বুয়েটের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ১০ দফা দাবি পড়ে শোনান শিক্ষার্থীরা। পরে তারা মিছিলসহ বুয়েটের হল ও ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সামনের সড়কে অবস্থান নেন।

আরও দেখা গেছে, থমথমে বুয়েট ক্যাম্পাসে পুলিশ ছিল না। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। তবে পলাশী মোড় ও আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি দেখা গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার পর ১০ দফা দাবি জানানোর পর বিভিন্ন হল ও ক্যাম্পাসে মিছিল করেন।

‘খুনিদের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই’; উই ওয়ান্ট জাস্টিস; রাজনীতির ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না- এমন স্লোগানে পুরো ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে ওঠে। পরে বুয়েটের প্রধান গেটের সামনের সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। ওই সড়কে সারা দিন অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য সব যান চলাচল বন্ধ ছিল।

সড়কের ওপর এমন অবস্থান কর্মসূচি চলার ফাঁকে ফাঁকে পাশ দিয়ে যাচ্ছিল বিভিন্ন সংগঠনের মিছিল। ওইসব মিছিল থেকেও আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচার চাওয়া হয়। দুপুরের দিকে ডাকসু ভিপি নূরের নেতৃত্বে একটি মিছিল ওই এলাকা পার করে। ওই মিছিল থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানানো হয়।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, হলে নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনে এলেও তারা ভয়ে আছেন। আন্দোলন স্তিমিত হলে তাদের ওপর আবার নির্যাতনের খড়গ নামতে পারে। তারা জানান, প্রতিটি হলের কয়েকটি কক্ষ ছাত্রলীগের কিছু নেতার জন্য বরাদ্দ দেয়া রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। এসব বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও বিচার পাওয়া যায় না। উল্টো বিচার দেয়ায় শিক্ষার্থীদের পেটানো হয়। ভয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মুখ খোলেন না। এ কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চান তারা।

দুই ছাত্রের বর্ণনায় আবরারের শেষ মুহূর্ত : বুয়েট শহীদ মিনারে সমাবেশে বক্তব্য দেন আবরারের শেরেবাংলা হলের ছাত্র আরাফাত ও মহিউদ্দিন। তাদের মধ্যে আরাফাত আফসোস করে বললেন, তিন-চার মিনিট আগে যদি সেখানে উপস্থিত হতে পারতাম, তাহলে হয়তো আবরারকে বাঁচাতে পারতাম। মহিউদ্দিন বললেন, আবরারকে কাতরানো অবস্থায় দেখার সময় ছাত্রলীগ নেতা জিয়ন বলছিলেন, ‘ও নাটক করতাছে।’ এ রকম পরিস্থিতিতে তাকে বাঁচাতে না পারায় এখন আফসোস হচ্ছে।

আরাফাত জানান, পড়া শেষে রাতে নিচে খাবার আনতে বেরিয়েছিলেন তিনি। তখনই দেখেন তোশকের মধ্যে একজন পড়ে আছেন। তখনও তার চিন্তায় আসেনি এ রকম হতে পারে। তার ধারণা হয়েছিল, হয়তো কেউ মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। এক সেকেন্ডের জন্যও মাথায় আসেনি এভাবে কাউকে মারা হতে পারে।

তিনি বলেন, যখন আবরারের হাত ধরি, তখন হাত পুরো ঠাণ্ডা, পা ঠাণ্ডা। শার্ট-প্যান্ট ভেজা। তোশক ভেজা। মুখ থেকে ফেনা বের হয়েছে। তখন ওকে বাঁচানোর জন্য বুকে চাপ দিই। হাতে চাপ দিই। আশপাশের সবাইকে বলি, কেউ একজন ডাক্তারকে ম্যানেজ কর। এরপর ডাক্তার এলো। ডাক্তার দেখে বলেন, ১৫ মিনিট আগেই আবরার মারা গেছেন। কাঁদতে কাঁদতে আরাফাত বলছিলেন, ‘তিন-চারটা মিনিট আগে যদি খাবার আনতে যাইতাম, তাহলে পোলাডারে বাঁচাইয়া রাখতে পারতাম। এই তিন মিনিটের আফসোসে তিনদিনে তিন ঘণ্টাও ঘুমাইতে পারি নাই।’

নিষ্ঠুরতার এই বর্ণনা দিতে দিতে মহিউদ্দিন কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ওরে বাঁচাইতে পারিনি। মাফ করে দিস, ভাই। আমারে সবাই মাফ কইরা দিস। আমি জীবিত দেইখাও ওরে বাঁচাইতে পারি নাই।’

শিক্ষক সমিতির একাত্মতা : শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে শিক্ষক সমিতি। বুধবার জরুরি সভা শেষে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. একেএম মাসদু এ কথা বলেন। তিনি বলেন, একজন অদক্ষ ভিসির কারণে আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট হতে দেব না। হলগুলোয় কী কী সমস্যা ও গণরুমে কী হয়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হলের টর্চার সেলে নির্যাতন বন্ধ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। হলে কিছু ছাত্রকে বিশেষভাবে আলাদা রুম দেয়া বন্ধ করতে হবে।

প্রশাসনে ছাত্ররা যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা তোমাদের নিরাপত্তা দিতে পারিনি। আমরা অপরাধী। বুয়েট শিক্ষক সমাজ আবরারের মা-বাবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কার করতে যাচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, তিন শ শিক্ষকের সমন্বয়ে মিটিং হয়েছে। সে মিটিংয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত আমরা লিখিত আকারে সুপারিশ করব। এছাড়া বুয়েটের স্বার্থে কোনো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পরোক্ষ রাজনীতিতে জড়িত হবে না বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষক সমিতির বৈঠক শেষে শিক্ষকরা মানববন্ধন করতে বুয়েট শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আসেন। রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবস্থান দেখে সেখানে এগিয়ে যান শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীদের সামনেই শিক্ষক সমিতির সভার আলোচনার সারবস্তু তুলে ধরেন সভাপতি ড. একেএম মাসুদ।

তিনি জানান, ওই ঘটনায় ব্যর্থতার দায় প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও রয়েছে। শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছেন। এ সময় বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত হন। মানববন্ধনে পদত্যাগী প্রভোস্ট উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানের মতো, আবরারও সন্তানের মতো।

অ্যালামনাইদের কর্মসূচি : দুপুরে বুয়েট ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ করেন বুয়েট অ্যালামনাইরা। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, বুয়েটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা। বুয়েট ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কার্যক্রম চলছে। এটা চলতে দেয়া যায় না। বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে যে পরিস্থিতি তা গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রশাসনের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে শেরে বাংলা হল অ্যালামনাইয়ের সভাপতি নাট্যাভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, এক অনুষ্ঠান করতে চিঠি দিয়ে ভিসির সঙ্গে দেখা করতে লেগেছিল দেড় মাস। এভাবেই চলে বুয়েট।

আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক আইনুন নিশাত, প্রকৌশলী মো. শহিদুল্লাহ, স্থপতি ইকবাল হাবিব, স্থপতি ইশতিয়াক জহির, প্রকৌশলী খন্দকার মঞ্জুর মোর্শেদ, স্থপতি সাঈদা সুলতানা এ্যানী প্রমুখ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষকরা অংশ নেন।

ছাত্রলীগের টর্চার সেল অনুসন্ধানে ‘গণতদন্ত কমিশন’ : বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে নির্যাতনের অসংখ্য কাহিনী আছে, তা জানতে ‘গণতদন্ত কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব করেছেন অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। একই সঙ্গে তারা আবরার হত্যার বিচার চেয়ে বলেছেন, এর দায় বুয়েটের ভিসি, প্রভোস্টও এড়াতে পারেন না।

বুধবার আবরার হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এই প্রস্তাব করেন তারা। নিপীড়নবিরোধী অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।

ঢাবি সাদা দলের মৌন অবস্থান : আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষকরা এই কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় শিক্ষকরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে আবরার হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানান।

কোনোভাবেই আন্দোলন বন্ধ করবেন না- ডাকসু ভিপি নূর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নূরুল হক নূর বুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা কোনোভাবেই আন্দোলন বন্ধ করবেন না। এ ধরনের আন্দোলনের ক্ষেত্রে অতীতে দেখা গেছে, প্রশাসন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়।

পরে আর কোনো ফলাফল পাওয়া যায় না। আপনারা ভয় পাবেন না। আমরা সবসময় আপনাদের সঙ্গে আছি। এ সময় ফাহাদ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরেরও দাবি জানান তিনি। আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ছাত্রদলের মৌন মিছিল : আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পা?সে মৌন মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সামনে থেকে শুরু হয়ে কলা ভবন এবং টিএসসি ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মুখে কালো ব্যাজধারণ ক?রে আবরার হত্যার প্রতিবাদ জানান। একই কর্মসূচি সংগঠনটি সারা দেশে পালন করে।

মিছিল শেষে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ছাত্রদল। সেখানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, আবরার হত্যা মামলায় যারা আসামি, তারা অনেকেই এখনও গ্রেফতার হয়নি। এর মধ্যে অমিত সাহা একজন। তাকে বাঁচিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে।

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা : আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। মিছিলটি প্রেস ক্লাবের সামনে গেলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। পরে সেখানে থেকে ফিরে আসেন নেতাকর্মীরা।

সর্বশেষ