প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তেহরান। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী, সেই সব অপরাধীদের জন্য কঠিন প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।
ব্রিটিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক কৌশলগত শিক্ষা ইনস্টিটিউটের মতে, ইরানের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন স্তরে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে সাড়ে তিন লাখ নিয়মিত সেনা ও অন্তত দেড় লাখ বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদস্য।-খবর বিবিসি বাংলার
চল্লিশ বছর আগে ইসলামি বিপ্লবী গার্ডস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যা পরবর্তী সময়ে ইরানে সামরিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী বাহিনী বলা হয় বিপ্লবী গার্ডসকে। এ বাহিনীর বিদেশি অভিযানের দায়িত্বে রয়েছে আল-কুদস ফোর্স, যার প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি।
মূলত আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ছাড়া আর কাছে জবাবদিতি করতে হয় না কুদস ফোর্সকে। বিদ্রোহীদের হাত থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদকে সুরক্ষায় সেখানে এই বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
এছাড়া ইরাকে শিয়া নিয়ন্ত্রিত আধা সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করে আসছে কুদস ফোর্স। জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে ইরাকের এসব বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাষায়, আমেরিকানরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মনে করেন এমন গোষ্ঠীকেই কুদস ফোর্স অর্থ, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও উপকরণ দিয়েছে। যার মধ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদও রয়েছে।
ইরানের প্রতিরক্ষা খাতে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যে পরিমাণ আমদানি হয়েছে, তা সৌদির আরবের মোট সামরিক আমদানির ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মাত্র।
ইরানিরা সামরিক খাতে বেশি আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে। এরপরে তাদের আমদানির তালিকায় দ্বিতীয় রয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মতে, দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড়। বিশেষ করে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।
তারা আরও বলছে, ইরান মহাকাশ প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতেই এমনটা করছে তারা।
২০১৫ সালের বহুপক্ষীয় পরমাণু চুক্তির পর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি স্থগিত রেখেছিল ইরান। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউট বলছে, চুক্তির অনিশ্চয়তার কারণে এই কর্মসূচি আবার শুরু হয়ে যেতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রেই সৌদি আরব ও উপসাগরীয় এলাকার অনেক নিশানা ইরানের স্বল্প বা মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের আওতাতে রয়েছে। বিশেষ করে ইসরাইল সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুগুলো।
তেহরানের আঞ্চলিক মিত্ররাও ইরানের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্ভুল হামলা চালানোর ব্যবস্থা ব্যবহার করে। বিশেষ করে সৌদি আরব, ইসরাইল ও আরব আমিরাতের টার্গেটগুলোর ক্ষেত্রে।
যুক্তরাষ্ট্র গত বছর মে মাসে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে মধ্যপ্রাচ্যে। যা ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে কয়েক বছরের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান তার ড্রোন সক্ষমতা বাড়িয়ে নিয়েছে।
আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ২০১৬ সাল থেকেই ইরাকে ড্রোন ব্যবহার করে ইরান। ২০১৯ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোনকে ভূপাতিত করে তারা।
বিবিসির প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক সংবাদদাতা জোনাথন মার্কাস বলেন, ড্রোন প্রযুক্তি তাদের মিত্রদের কাছেও স্থানান্তর বা বিক্রিও করেছে ইরান।
২০১০ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর বড় ধরণের সাইবার হামলার পর তারা সাইবার স্পেস সক্ষমতায় জোর দেয়। বিপ্লবী গার্ডসের নিজস্ব সাইবার কমান্ড আছে বলে মনে করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের গত বছরের এক প্রতিবেদন বলছে, ইরান অ্যারোস্পেস কোম্পানি, প্রতিরক্ষা ঠিকাদার, এনার্জি ও ন্যাচারাল রিসোর্সেস কোম্পানি ও টেলিকম ফার্মগুলোকে তাদের বিশ্বব্যাপী সাইবার হামলার কাছে নিশানা বানিয়েছে।
২০১৯ সালে মাইক্রোসফট জানায়, ইরানভিত্তিক একটি হ্যাকার গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারকে টার্গেট করেছিলো ও তারা মার্কিন সরকারের অ্যাকাউন্টগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করেছিলো।