সাংবাদিক হিসাবে লজ্জিত দুঃখিত ক্ষমা প্রার্থী!

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক :: সাংবাদিকরা জাতির বিবেক।গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। যুগে যুগে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যম কর্মিরা জাতিকে পথ দেখিয়েছে, আলোর সন্ধান দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পেশাজীবি সংগঠন হিসাবে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছে। সাংবাদিক বা গণমাধ্যম কর্মিদের সমাজে অন্য ৮/১০টা পেশাজীবি সংগঠন থেকে অনেক বেশি চিন্তাশীল, বিবেকবান, আত্মমর্যাদাশীল সংগঠন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ প্রভাবে লন্ডভন্ড বিশ্ব অর্থনীতি। সংকটে বাংলাদেশও। এ অবস্থায় দেশের অসহায়, দরিদ্র, দুস্থ মানুষের সহায়তার জন্য সরকার ত্রান বিতরণ শুরু করেছেন। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি, গোষ্ঠি ত্রাণ দিচ্ছেন, অসহায় মানুষের সহযোগিতা করছেন। এরমধ্যে একটি সংবাদ গণমাধ্যম কর্মিসহ সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। তা হচ্ছে, একটি রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে সাংবাদিক নেতারা সাংবাদিকদের সাহায্যের জন্য ত্রাণ নিয়েছেন!! একই ভাবে চট্টগ্রামেও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ত্রাণ সাহায্য নিয়েছেন!! সাহায্য হিসাবে নেয়া এসব ত্রাণের অধিকাংশই হচ্ছে নিম্মমানের। দেশের দুর্যোগময় মুহুর্তে বিভিন্ন সংগঠন যখন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে তখন সাংবাদিক সংগঠনের কথিত নেতাদের ত্রাণ ভিক্ষা কতটুকু যৌক্তিক!! বিভিন্ন সংগঠন গরীব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে আপনারা কেন পারলেন না! নেতাদের অনেকেই আছেন যারা বাড়ি, গাড়ি, কোটি টাকার মালিক। বৈধ-অবৈধ পন্থায় বিপুল অর্থ-বৈভবের মালিক হয়েছেন, এরপরও গরীবের হকের জন্য হাত পাততে লজ্জা করেনি?? কেন সাংবাদিকদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে পঁচা চাল ভিক্ষা চাইলেন? আপনারা কেন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালেন না। করোনা দেশের সাধারণ মানুষকে দুর্যোগ-দুর্ভোগে ফেললেও কতিপয় দুর্বৃত্তের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে!!! এদের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামে সাংবাদিক নামধারী দুর্বৃত্তরাও রয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, বিভিন্ন সংগঠন ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন, কিন্তু সংগঠনগত ভাবে সাংবাদিকরা কেন ত্রাণ বিতরনের উদ্যেগ নেয়নি? বাংলাদেশে এমন কি অবস্থা হয়েছে, সাংবাদিক বা গণমাধ্যম কর্মিদের ত্রাণের চালের ভিক্ষার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে ধর্ণা দিতে হবে? এজন্য পঁচা, দুর্গন্ধ চাল সংগ্রহ করতে হবে? ২৫কেজির কথা বলে ৫ কেজি ধরিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশে সাংবাদিকেদের অধিকাংশই ভাল বেতনে চাকুরী করেন। নানা কারনে অনেকে হয়ত বেকার হয়ছেন, কিন্তু তাই বলে ৫ কেজি পঁচা চাল, ১/২ লি. তেল কিংবা আলু, চিনি কেনার মত সাধ্য নেই এমন সাংবাদিক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমার জানা মতে,চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটি বৃহৎ অংশ ত্রাণ ভিক্ষা কিংবা লুটপাটের সাথে যুক্তনন। কতিপয় সাংবাদিক নামধারী দুর্বৃত্ত সংগঠনের নাম ব্যবহার করে অসহায়, গরীবের ত্রান নিয়ে নয়-ছয় করায় আজ গোটা সাংবাদিক তথা গণমাধ্যম কর্মিদের গৌরনময় ইতিহাসকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। সাংবাদিকতা পেশাকে কুলষিত করেছে, সাংবাদিক সমাজকে ভিক্ষুক বানিয়েছে। দেশের অন্য কোন পেশাজীবি সংগঠন এভাবে ত্রাণ ভিক্ষা নিয়ে নিজের পেশাকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে এমন কোন নজির নেই। গণমাধ্যম কর্মি হিসাবে আমি নিজেও লজ্জিত, মর্মাহত এবং দুঃখিত। আজকে সাংবাদিকতা পেশাকে কুলষিত করে যারা গোটা সাংবাদিক সমাজকে ভিক্ষুকে পরিনত করেছে, কাঙালি বানিয়েছে, কাঙালির খাতায় নাম লিখিয়েছে, গরীব অসহায়, দরিদ্র মানুষে ত্রাণে ভাগ বসিয়েছে সময় এসেছে এসব দুর্বৃত্তদের মুখোশ উন্মোচন করার। গলায় সেন্ডল ঝুলিয়ে সাংবাদিক সংগঠন থেকে বের করে দিয়ে পেশার মর্যাদা ফিরে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। সকল সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে বিনীত অনুরোধ, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে যারা সাংবাদিকতাকে কুলষিত করে ত্রাণ ভিক্ষা নিয়ে লুটপাট, ভাগাভাগি করছে তাদের চিহ্নিত করুন, মানুষের সামনে, এদের পরিবার-পরিজনের কাছে এসব অপকর্ম তুলে ধরুন, তাদের প্রত্যাখান করুন। আমি জানি, আমার এ লেখায় অনেকে মর্মাহত হয়েছেন, তাদের বিনয়ের সাথে প্রশ্ন করতে চাই, আপনি আপনার বিবেককে প্রশ্ন করুন, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তার এই সাংবাদিকতা পেশাকে। আসুন, পেশার মর্যাদা রক্ষা, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় বিকল্প গড়ে তুলি। এভাবে আর সাংবাদিকতাকে কুলষিত হতে দিতে পারি না!! সাংবাদিক হিসাবে আমি লজ্জিত, দু:খিত ক্ষমাপ্রার্থী। #

লেখক, সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস,
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও একুশে টেলিভিশন চট্টগ্রাম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক।

সর্বশেষ