রিয়াজুর রহমান রিয়াজ :: সংবাদ সংগ্রহের নিমিওে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা দিন-রাত সংবাদের পিছনে ছুটে চলছে , তাদেরকেই আমরা সাধারনত সংবাদকর্মী বলে থাকি । আর বর্তমান এ নিষ্ঠুর বাস্তবতায় দেখা যায়, এসকল সংবাদকর্মীদের কাঁদে ভর করে মূল পেশাটাকে জিম্মি করে একটি মহল নিজেদেরকে অনেক বড় অথবা মূলধারার সাংবাদিক হিসাবে জাহির করে গর্বিত মনে করে। কিন্তু মুলধারার সাংবাদিক বলতে মুষ্টিময় ব্যক্তিরা আসলে কি বুঝাতে চাচ্ছেন ? তা কিন্তু আবার স্পষ্ট করে বলতেও পারছে না । অনেকাংশই দেখা যায় এসকল সাংবাদিক নেতারা কখনাে সংবাদকর্মী ছিল না , পক্ষান্তরে সরাসরি সাংবাদিক হয়েছে , তারপর নিজেদের ফায়দা লোটার আশ্রয় হিসেবে এখন সংবাদ কর্মীদের নেতা । অন্যদিকে প্রকৃত সংবাদকর্মীরা পারে না সাংবাদিক হতে , অথবা সাংবাদিক নেতা হওয়ার সুযােগ দেয়া হচ্ছে না । যার প্রেক্ষিতে সার্বক্ষনিক মাঠে ময়দানে থাকা এসব সংবাদকর্মীদের জীবন মানের যেমন উন্নতি হচ্ছে না , তেমনি জীবনে বিরাজ করছে অনেক বেশি লুকায়িত অসচ্ছল । আবার ঐ সকল বড় বড় সাংবাদিকদের প্রায় সবারই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান , পরিবহন ব্যবসা এবং ঠিকাদারী । সারাদিন তারা তাদের এসকল ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় । শুধু নামসর্বস্ব বিকালে পত্রিকা অফিসে এসে সংবাদকর্মীদের নানাবিধ জবাবদিহি করন , অথবা সাংবাদিক সংগঠনের অফিসে গিয়ে আড্ডা মারা । ঠিক এতটুকুর মধ্য দিয়েই এসকল সাংবাদিক নেতাদের সাংবাদিকতার সিমাবদ্ধতা দেখা যায় । যার করনে দেশের দুর্যোগ মুহুর্তে সরকারি বা প্রাইভেট পর্যায় থেকে যখন সংবাদকর্মীদের জন্য কোন সহায়তা আসে, তখন এসকল নেতাদের ভীরে তা গোগ্রাসে গিলে ফেলে, হয়ে যায় লাপাত্তা। যার কারনে অনেকাংশ কর্মীরা তা পায়না । অন্যদিকে বিভিন্ন গনমাধ্যমের পরিচয়ে অনেকেই সাংবাদিক সংগঠগুলাের মেম্বার, কিন্তু তাঁরা আবার বর্তমানে অন্য পেশায় জড়িত । সাংবাদিক সংগঠনের নিবার্চন এলে তারা শুধু ভােট দেন , সাংবাদিকতা তাদের করতে হয়না, বরং সংগঠনের তালিকায় নাম উল্লেখ থাকে । এদের মধ্যে কেউ কোটিপতি ঠিকাদার , কেউ ব্যাংকার। আবার অনেকেই একাধিক সিএনজি অটোরিকশা ও পিকাপ ভ্যানের মালিক । ট্রাক , বাস গাড়ীও রয়েছে অনেকের , অনেক অর্থ বিত্তের মালিক । তারপরও এ মহামারি করােনা ভাইরাসে প্রভাবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত সংবাদকর্মীদের প্রাপ্ত বিভিন্ন সামগ্রী সহায়তা লুঠিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে সাংবাদিক নামধারী এসকল বিওশালীরা ! এসকল বেড়াজালে শুধু মাএ সাংবাদিকতা পেশায় নিয়ােজিত রয়েছে এমন বিওহীন প্রকৃত সাংবাদিকরা বঞ্চিত থেকেই যায় । সংবাদকর্মীদের দাবী , ফান্ড তৈরীর নাম করে ব্যক্তি অথবা কোন সাংবাদিক সংগঠন যেন বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী এবং নগদ অর্থ হাতিয়ে নিতে না পানে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে । প্রসঙ্গত, করােনা ভাইরাস সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সংগ্রহ এবং পরিবেশন করে যাচ্ছেন সংবাদকর্মীরা । এ অবস্থায় ঝুঁকিতে থাকা সংবাদকর্মীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রণােদনা চাওয়া হয়েছে । গত ( ১ এপ্রিল ) সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন , বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ( বিএফইউজে )’র নেতারা রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এ বিষয়ে আবেদনপত্র হস্তান্তর করেন । আর সংবাদকর্মীরা প্রত্যাশা রাখে যাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবাদকর্মীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিবেচনায় শীর্ঘই একটি সম্মানজনক প্রণােদনা প্যাকেজ ঘােষণা করবেন। পাশাপাশি দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে সংবাদকর্মীদের প্রাপ্ত সহায়তা শুধু সাংবাদিক সংগঠনের মধ্য সিমাবদ্ধতা না রেখে, মফস্বল পর্যায়ে কর্মরত জাতিয় ও স্থানীয় পত্রিকার প্রতিনিধি , ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া এবং প্রকৃত অনলাইন গণমাধ্যমের নিজ নিজ অফিস ভিওিক তালিকা প্রণয়ন করে, এ দুর্যোগ মুহুর্তে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সংবাদকর্মীদের প্রাপ্ত অধিকার নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক :: সিনিয়র রিপোর্টার – আমাদের অর্থনীতি, চট্টগ্রাম ।