প্রিয় সংবাদ ডেস্ক :: হাটবাজার, সড়ক-মহাসড়ক ও অলিগলিতে যার যার ইচ্ছেমতো চলাফেরা করছে মানুষ। এরমধ্যে কারো কারো মুখে মাস্ক দেখা গেলেও অনেকের মুখেই নেই। হাত গ্লাভস আর পিপিই, সে তো স্বপ্নের ব্যাপার। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এসব উপকরণের ব্যবহার যেখানে নেই, সেখানে স্বাস্থ্যবিধির কিছুই নেই। তার ওপর সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা যেন কাল্পণিক এক বিষয়। চট্টগ্রাম মহানগরের হাটবাজার, সড়ক-মহাসড়ক, অলিগলি না ঘুরলে এসব অনুমান করা মোটেই সহজসাধ্য নয়। ৮০ লাখ মানুষের ঘনবসতি এই শহরে যেখানে একটি কক্ষে একাধিক পরিবারের ৮-১০ জন সদস্য ঘুমায়, সে শহরে বাজারে গেলে ধাক্কা খেয়ে নাজেহাল না হয়ে ফেরাটা খুবই আশ্চর্য্যের বিষয়। আর যানবাহন সে যেন এখন গাধার বাহন।
সীটভর্তি যাত্রী তো আছেই, আগের মতো দাঁড়িয়ে, বাম্পারে ঝুলে যাতায়াত মোটেও অদৃশ্য নয়। অভিজাত মার্কেটগুলোও এর ব্যত্ক্রিম নয়। করোনা সংক্রমণ রোধে দোকানপাট, মার্কেট, যানবাহন মালিকের সিন্ডিকেটগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সবই যেন বুমেরাং। এসব নিয়ে মাথা ব্যাথাও নেই সাধারণ মানুষের। কারণ এসব সাধারণ মানুষের দেখা চিরায়ত দৃশ্য। বরং নগরীর সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার কিছু দৃশ্য দেখে হতবাক হয় নগরীর মানুষ। আর হতবাক হয় বিকেল পাঁচটা বাজলে।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে অদ্যাবধি নগরীর পুলিশ পাঁচটা বাজলে হাট-বাজার ও সড়কে নেমে লকডাউন বলবৎ করে। আর এ সময় পুলিশ যা করে তা রীতিমতো তান্ডব। পুলিশ প্রথমে সাইরেন বাজিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর দোকানদার ও হাটবাজারের ব্যবসায়ীদের বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করে। নাজেহাল করে ক্রেতা সাধারণকে। নিত্যদিনের এসব ঘটনায় চরম ক্ষুব্দ নগরবাসী।
বুধবার বিকালে ৫টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট কাচাবাজারে পণ্যবিক্রী করায় চান্দগাঁও থানা পুলিশের একটি টিম কয়েকজন ব্যবসায়ীকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। ক্রেতাদেরকেও অশ্লীল গালিগালাজ করে। এরমধ্যে আনিসুর রহমান নামে এক তরকারি ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকাল থেকে বেচাকোনা চলছে। স্বাস্থ্যবিধি বালাই নেই। বিকাল হলেই স্বাস্থ্যবিধি মানা বা লকডাউন করার জন্য পুলিশ এতো বেপরোয়া হয়ে উঠে কেন? তাহলে করোনা কী দিনে ঘুমায় আর বিকাল পাঁচটায় জেগে ওঠে। বিকাল হলে মানুষকে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে পুলিশ মরিয়া হয়ে ওঠে। কী দেশপ্রেম পুলিশের!
শুধু বহদ্দারহাট নয়, নগরীর কাজীর দেউরি বাজারেও পুলিশের এমন তাণ্ডবের কথা জানান ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিকাল ৫টা হলে পুলিশ বাজারে নেমে তরকারি বিক্রেতা, মাছ, ফল ও মুরগী বিক্রেতাদের লাঠিপেটা করে। কিন্তু কিছু কিছু ব্যবসায়ী সন্ধ্যার পর দোকান খোলা রাখলেও কিছু করে না। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে গোপন লেনদেনের তথ্যও রয়েছে আমাদের। নগরীর চকবাজারের মাছ বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে চট্টগ্রামে পুলিশ যেসব কাজ করেছে তার সবকিছুই লোক দেখানো। বাস্তবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব বাজায় রাখায় পুলিশ পুরোপুরি ব্যর্থ। পুলিশ যা করছে সব সরকারি সুবিধা আদায় ও প্রমাশনের জন্য করছে। অন্যথায় দিনভর জনসাধারণের চলাচল নিয়ে পুলিশের কোন মাথা ব্যাথা নেই। যানবাহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। শুধু বিকালেই কী করোনা জেগে ওঠে?
করোনার নামে দোকানপাট ও সড়ক থেকে মানুষ তাড়িয়ে পুলিশ নানা অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে সিএমপির বিশেষ শাখার উপ-কমিশনার আবদুল ওয়ারিশ খান বলেন, করোনা ঘুমায়ও না, জাগেও না। করোনার কাজ করোনা করছে। এর ফল তো দেখছি চট্টগ্রামে ক্রমেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। মঙ্গলবার রাতের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রামে ৭ হাজার ছুঁই ছুঁই করছে করোনা শনাক্ত। মারা গেছে ১৫১ জন। এর ফল স্বাস্থ্যবিধি না মানা। সামাজিক দুরত্ব না মানা। তিনি বলেন, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত করোনা সংক্রমণে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব মানার কোন লক্ষণ নগরবাসীর মধ্যে দেখা না গেলেও কিছুই করার নেই। কারণ পুলিশ তার কর্তব্য বুঝে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে লকডাউন করার সরকারি আদেশ পালন করছে পুলিশ। এতে কোন কোন ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করতে হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ পুলিশের ওপর একটু রুষ্ট হতেই পারে। তবে লাঠিপেটা করার কথা নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, হাটবাজার, মার্কেট, যানবাহন যেখানেই বলেন চট্টগ্রামে আসলে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এ কারণে চট্টগ্রামে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমিত রোগী। আজ বুধবার একদিনে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ২৮০ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। নগর বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক শাহরিয়ার কবিরের মতে, নগরীর ৪০ ভাগ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেছে। পরিস্থিতি এখন এমন যে, হাত-পা ছেড়ে দেয়ার মতো অবস্থা। এখান থেকে পেছনে ফেরা এত সহজ নয়। সবকিছু আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। সূত্র:: মানবজমিন