হাটহাজারীতে প্রশাসনের দাপটে জোরপূর্বক ব্যাক্তিমালিকানা ভ‚মি দখল, অভিযোগ ইউএনও রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে

 

- Advertisement -

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:: চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা কামালপাড়া খানসামা মসজিদ এলাকায় বেআইনি দাপট খাটিয়ে জোর পূর্বক ব্যক্তি মালিকানা জায়গা দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মানের অভিযোগ উঠেছে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে। বিনা নোটিশে গত শনিবার (১৮জুলাই) প্রায় ২৫/৩০ জন ভাড়াটে লোক দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন স্থানিয় নুরুল আবছারের পরিবারের কবরস্থানসহ মূল্যবান প্রায় সাড়ে ১০ শতক জায়গার উপরে পাকা স্থাপনা নির্মানের কাজ শুরু করে। এ জায়গা নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞাসহ ৩টি মামলা চলমান রয়েছে উল্লেখ করে এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভ‚ক্তভোগি পরিবার গত রোববার (১৯জুলাই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। ভ‚ক্তভোগি পরিবারের সদস্য নুরুল আবছার জানান, কোন প্রকার নোটিশ না দিয়ে আমাদের পৈত্রিক মালিকানা ভূমিতে বেআইনিভাবে পাকা স্থাপনা নির্মানকাজ শুরু করে হাটহাজারীর ইউএনও রুহুল আমিন। মামলার প্রতিপক্ষকে বেআইনি সুবিধা দিতেই পৈত্রিক খরিদা ৪ দশকের অধিক পুরনো এ জমিতে বেআইনি ভাবে জবর দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন ইউএনও। অথচ জায়গাটির উপর বিজ্ঞ আদালাতের ফৌজদারি মামলায় নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, এছাড়া বিজ্ঞ জজ আদালতে একটি চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলাও বিচারাধীন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগ প্রতিপক্ষের পক্ষ নিয়ে আদালত ও আইনকে অমান্য করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ইউএনও রুহুল আমিন হাটহাজারীর সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন (বর্তমানে রাউজানের পিআইও) কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদের সহযোগীতায় অবৈধভাবে জোরপূর্বক ব্যক্তিমালিকানা জায়গা দখল করতে ভাড়াটে লোক লাগিয়ে দিয়েছে। এ জায়গা থেকে মাটি কেটে গভীর রাত অব্দি পাকা স্থাপনা নির্মানের কাজ করে চলেছে শ্রমিকরা। ভুক্তভোগীর পরিবারে সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঁধা প্রদান করলে শ্রমিকরা বলে ইউএনও রুহুল আমিনের নির্দেশে আমরা কাজ করছি। কাজে বাধা দিলে মামলা দিয়ে পুলিশে দেয়া হবে হুমকি দেয় উপস্থিত কিছু শ্রমিকবেশী সন্ত্রাসী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন স্থানিয় সাংবাদিকদের বলেন, স্কাউট ভবন তৈরীর জন্য ওখানে কাজ শুরু করেছি। কোন টেন্ডার বা অনানুষ্ঠানিকতা হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে ইউএনও জানান পরে করা হবে। ব্যক্তি মালিকানা জায়গা দখল করেছেন মর্মে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা কোন ব্যক্তির না, যদিও হয়ে থাকে আইনি ভাবে পেয়ে থাকলে ছেড়ে দেয়া হবে। মামলার বিবরন ও ভুক্তভোগী পরিবার সুত্রে জানা যায়, হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা মৌজায় আর এস ১২৬০৩ দাগের ৪১শতক জায়গা ক্রয় সুত্রে মালিক হন মরহুম নুরুল হক। বিএস ১৩২১২ দাগের এ জায়গায় নুরুল হক কোম্পানীর পারিবারিবারিক কবরস্থান ও ভিটিভ‚মিসহ চাষের জমি রয়েছে। মরহুম নুরুল হকের পরিবার ক্রয়কৃত এ জায়গায় প্রায় ৪দশকের বেশি সময় ধরে তারা সেখানে চাষাবাদ করে আসছে। এ দাগের ৪১শতাংশ জমির ১০.২৫ শতাংশ জমি ভ‚লক্রমে ভ‚লদাগে (বিএস-১৩২১০) অর্পিত সম্পত্তির ‘খ’ তফশিলের গেজেটে তালিকাভ‚ক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে সরকার আইন করে উক্ত ‘খ’ তফশিলের গেজেটভ‚ক্ত ভ‚মি অবমুক্ত ঘোষনা করলে জায়গার বর্তমান মালিক নুরুল আবছার ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সরকারের এ আইন মোতাবেক উক্ত ভ‚মির নামজারীর জন্য সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) হাটহাজারী কার্য্যালয়ে বিবিধ মামলা নম্বর ৩৬১/১৫ রুজু করেন, মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে। এদিকে কামাল পাড়ার স্থায়ি বাসিন্দা ও সাবেক হাটহজারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোরশেদ (বর্তমানে রাউজানে কর্মরত) সহযোগী নুর মোহাম্মদ ও রেজাউল করিম বাবু গং এর কুনজর পড়ে মূল্যবান এ জমির উপর, তারা এ জমির কিছু অংশ দখল করার চক্রান্ত শুরু করে করে। প্রশাসনের কর্মচারী হয়ে নিয়াজ মোর্শেদ স্থানিয় প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে এ জায়গা দখল করতে সংঘবদ্ধ চক্র নিয়ে গত ২৯ জানুয়ারী ২০ইং সকালে জবরদখল করার চেষ্টা করে। ভুক্তভোগী পরিবার বাধা দিলে তখন তারা পালিয়ে যায়। এ সম্পত্তি দখল করতে বেপরোয়া হয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে পিআইও মোরশেদ পুনরায় গত ১৫ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ভাড়াটে লোক দিয়ে জবর দখল করতে গেলে জায়গার মালিক আত্মীয় স্বজনের সহযোগীতায় তাদের বাধা দিলে তারা বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়। পরে মরহুম নুরুল হকের পুত্র মোঃ নুরুল আবছার বাদি হয়ে বিজ্ঞ চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে অভিযুক্ত পিআইও মোর্শেদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মিস মামলা রুজু করেন, মামলা নম্বর ৬৩/২০২০ (হাট)। রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকায় আদালত এ মামলায় উক্ত জমিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। অন্যদিকে একই ব্যাক্তিদের বিবাদী করে ভ‚মির মালিক নুরুল আবছার ও পরিবারের সদস্যরা বিগত ২৪ মার্চ ২০২০ তারিখে সিনিয়র সহকারী জজ , হাটহাজারী আদালতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনায় অপর মোকাদ্দমা নম্বর ৬৪/২০২০ দায়ের করেন। বর্তমানে উপরোক্ত মামলা ২টি বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন আছে। সুত্রে জানা গেছে, আদালত ও আইনকে অমান্য করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিনের নির্দেশে গত শনিবার সকালে পিআইও নিয়াজ মোর্শেদের তত্বাবধানে ২৫/৩০ জনের ভাড়াটে লোক দিয়ে নুরুল আবছারের পরিবারের ব্যাক্তি মালিকানা সম্পত্তির পশ্চিমাংশে প্রায় সাড়ে১০শতক জায়গা জবর দখল করে মাটি কেটে একদিকে ডোবা ও অন্যদিকে ভরাট কাজ শুরু করে। শনিবার ও রোববার গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা ঢালাই সহ পাকা স্থাপনা নির্মানের বিভিন্ন কাজ করে। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানতে চাইলে ইউএনও রুহুল আমিনের নির্দেশে নির্মান কাজ করছে বলে ওই কাজের ভাড়াটে লোকজন জানান। গতকাল সোমবার বেলা পৌণে ২টার দিকে ইউএনও রুহুল আমিন গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। কিছুক্ষন ঘটনাস্থলে অবস্থান করে সরকারী লাল পাজেরো জীপ গাড়ীযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এর আগে গত মঙ্গলবার ( ইউএনও রুহল আমিন জায়গার মালিকপক্ষকে কোন ধরনের নোটিশ না দিয়ে সরকারী সার্ভেয়ার দিয়ে জায়গাটি পরিমাপ করেন। এ সময় প্রশাসনের লোকজন ছাড়াও জমির মালিকের মামলার প্রতিপক্ষ সাবেক পিআইও নিয়াজ মোর্শেদ, নাশকতার মামলার আসামী রেজাউল করিম বাবু’র সঙ্গে ইউএনও রুহুল আমিনকে ঘটনাস্থলে বিভিন্ন পরামর্শ করতে দেখা যায়। এসময় ঘটনাস্থলে গিয়ে জায়গা পরিমাপের কারন জানতে চাইলে ভ‚মি মালিকের পরিবারের সদস্যদের ইউএনও মামলা দিয়ে জেলে ঢোকানোর হুমকি দেয় বলে অভিযোগে প্রকাশ। এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিনের পুরোনো তাদের বাবার ক্রয় করা সম্পত্তি ও পারিবারিক কবরস্থান প্রশাসনের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জবর দখল করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। পরিবারের সদস্য নুরুল আবছার বলেন লোভের বশবতি হয়ে সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদ ও ইউএনও রুহুল আমিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোরপূর্বক পৈতৃক অর্পিত সম্পত্তি দখল করে ওখানে পাকা স্থাপনা নির্মানের পায়তারা করছে। মামলার প্রতিপক্ষ ব্যক্তি বিশেষকে জবরদখলে সহযোগীতা করতে প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে বেআইননিভাবে ইউএনও রুহুল আমিন সরকারি ভবন নির্মাানের ছলে ব্যাক্তিমালিকানাধীন জায়গা দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছে তাদের কোন নোটিশ পর্যন্ত দেয়নি উপজেলা প্রশাসন । এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন স্থানিয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, স্কাউট ভবন তরীর জন্য ওখানে কাজ শুরু করেছি। কোন টেন্ডার বা অনানুষ্ঠানিকতা হয়েছে কিনা সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করলে ইউএনও রুহুল আমিন জানান পরে করা হবে । ব্যক্তি মালিকানা জায়গা দখল করেছেন মর্মে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন এটা কোন ব্যক্তির না। যদিও হয়ে থাকে আইনি ভাবে পেয়ে থাকলে ছেড়ে দেয়া হবে।

সর্বশেষ