মো.মুক্তার হোসেন বাবু :: চট্টগ্রামে মত্যুহীন দ্বাদশ দিনে করোনার সংক্রমণ হার অনেক বেড়েছে। এদিন নতুন করে ৪৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সংক্রমণের হার ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগের দিনের হার ছিল ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় প্রতিদিন প্রাণহানির খবর এলেও তা কমতে শুরু করেছে। চলতি অক্টোবর মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন মাত্র ৮ জন। সর্বশেষ গত ১২ দিনে কোনো মৃত্যু নেই। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন-রোগীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতি এবং চিকিৎসার অধিক সুযোগ সৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমে এসেছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে ৬৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ জন। এ নিয়ে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২০ হাজার ৯০৩ জন। এইদিনও চট্টগ্রামে করোনায় কোনো মৃত্যু ঘটনা ঘটেনি। গত মঙ্গলবার রাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এইদিন কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবসহ চট্টগ্রামে ৫টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ৩৪৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শনাক্ত হয় ১২ জন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ১৭১টি নমুনা পরীক্ষা করে ২১ জন করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। এইদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাব, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। শেভরণ ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ১২০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪ জন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে (আরটিআরএল) একটি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনাটি পজেটিভ শনাক্ত হয়।তাছাড়া, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের ১টি নমুনা পরীক্ষা করে কারো শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেনি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় ৪৩ জন নতুন শনাক্ত হয়েছেন। এইদিন নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৬৫৪টি। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে নগরে ৩৯ জন এবং উপজেলায় ৪ জন।
এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে ২১ জনের মত্যু হয়। এছাড়া আগস্ট মাসে ৩৭ জন, জুলাই মাসে ৫৮ জন, জুন মাসে ৯৮ জন, মে মাসে ৬৮ জন এবং এপ্রিল মাসে মত্যুবরণ করেন ৮ জন। গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাতকানিয়ার এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এরপর চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ এখন পর্যন্ত মোট ৩০২ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
করোনায় মৃত্যু কমে যাওয়ার বিষয়ে জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট এইচ এম হমিদুল্লাহ মেহেদি বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, চিকিৎসা পদ্ধতিতে চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। তিনি বলেন, প্রথমদিকে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেতো না। এখন হাসপাতালে আসন খালি থাকছে। করোনা চিকিৎসার সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে। এসব কারণেও মৃত্যুর সংখ্যা কমে থাকতে পারে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন তারা প্রথম দিকে আক্রান্ত হয়েছেন। মানুষের মধ্যে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এসেছে। সচেতনতাও বেড়েছে। ফলে বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তার সহজেই সুস্থ হয়ে উঠছেন।এছাড়া করোনা চিকিৎসায় মেডিক্যাল সায়েন্সের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিভাবে চিকিৎসা দিতে হবে এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা বাড়ার কারণে মৃত্যু ঝুঁকি কমছে।
তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় পর্যায় শুরুর কথা বলছেন অনেকে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায় বলতে গেলে প্রথম পর্যায়ের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। তাহলেই দ্বিতীয় পর্যায় বলা যাবে। আমাদের এখানে তো এখনও প্রতিদিনই নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।