প্রিয় সংবাদ ডেস্ক :: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। সেজন্য আমরা মনে করি যে, ভারতের সঙ্গে স্থল পথের যে সীমান্ত আছে, এই সীমান্তগুলো একেবারেই বন্ধ করা দরকার। শনিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ইতিমধ্যে আপনারা লক্ষ্য করেছেন- বলা হচ্ছে যে, বাইরে থেকে যারা আসবেন বিমানপথে, তাদেরকে মাত্র তিনদিন কোয়ারেন্টিন করতে হবে। যেটা আমি বিশ্বের কোথাও শুনিনি। এই যে সমস্ত সিদ্ধান্তগুলো, এই সমস্ত সিদ্ধান্তগুলো আমাদের পরিস্থিতিকে ভয়ংকরভাবে নাজুক করে ফেলেছে। এখন এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে, লকডাউনের পরে একটা সপ্তাহ সবাই বাইরে চলে গেলো, এখন আবার বলা হচ্ছে যে, আগামী রোববার থেকে শপিংমল-দোকানপাট খুলে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আজকের পত্রিকায় এসেছে যে, যারা এসব দোকানপাটে কাজ করছেন, ছোট ছোট দোকান যারা করেন তারা সবাই বাইরে চলে গিয়েছিলো তারা আবার ফিরতে শুরু করেছেন। আবার ঈদের আগে তারা আবার গ্রামের ফিরে যাবেন। ফলে কী হবে? সারা দেশেই করোনাভাইরাসের সংক্রামণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে যে ভেরিয়েন্ট এসেছে তা ভয়াবহভাবে বাংলাদেশে ছড়িয়েছে। এমন একটা পরিবার নেই যেখানে এই সংক্রামণ যায়নি। এমনকি শিশু পর্যন্ত এবার বাদ পড়ছে না। আমরা এ বিষয়ে আগেও বলেছি। এখনো আমরা সরকারকে বলতে চাই যে, এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার এবং একটা পরিকল্পিত, সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা প্রয়োজন। এটা লেজে গোবরে করে ফেলেছে যেন এখন কোনটাই সামাল দিতে পারছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, চলমান লকডাউনের নামে শাটডাউন অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের সর্বশেষ উদাহরণ। এবারকার লকডাউনে মানুষের দুরবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে। এর মূলে দুটি কারণ- একটি রাজনৈতিক, অন্যটি অর্থনৈতিক।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, লকডাউনের নামে মূলত সরকার বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারী আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন ঘোষণা করেছে। লকডাউনের শুরুর দিন থেকেই সারাদেশে ব্যাপকভাবে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামাসহ বিএনপি ও এর অংগসংঠনের শত শত নেতাকর্মীকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
সরকারের অপকর্ম, দুর্নীতি, অত্যাচার, নির্যাতন ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে না পারে সেজন্য সবাইকে কোনো না কোনোভাবে নিবর্তনমূলক আইনের আওতায় এনে কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে বিএনপি যেসব আশঙ্কা করেছিল ইতোমধ্যেই তার অনেক কিছু সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের জন্য রাষ্ট্র, সমাজ, দেশ সবকিছু। জিডিপির বিশাল সাইজ দিয়ে কী হবে যদি জনগণই বেঁচে থাকতে না পারে? বিএনপি আশা করে করোনা মহামারিকালে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির প্রতিটি মানুষ যাতে সুস্থ থাকে, খেয়ে পরে বাঁচতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করে দলটির মহাসচিব বলেন, লকডাউনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দিন আনে দিন খায় শ্রেণির গরিব দিনমজুর পেশাজীবী ও নি¤œ আয়ের মানুষদের প্রত্যেককে এ পর্যায়ে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয় বিশেষ তহবিল থেকে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ৩ মাসের জন্য ১৫ হাজার টাকা এককালীন নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতির আলোকে প্রয়োজনে এ বরাদ্দ নবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা অর্থাৎ দারিদ্র্যের বর্তমান হার বিবেচনায় নিয়ে সমগ্র দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা সহায়তা প্যাকেজের আওতায় আনতে হবে। গত বছরের অভিজ্ঞতা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নিরপেক্ষভাবে দুঃস্থ উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। যাতে রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে প্রকৃত দুস্থ এই মানবিক প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত না হয়।