ভুলতে পারছেনা সেই মুহুর্ত চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা

 

- Advertisement -

মো.মুক্তার হোসেন বাবু :: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে কহিস্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ওই দূর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেছেন ৬ জন। তাদের ঠাঁই হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪ ও ২৮ নং ওয়ার্ডে। আহত ছয়জন হলেন, মাইক্রোবাসের হেলপার তৌকিদ ইবনে শাওন (২০), একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মাহিম (১৮), তানভীর হাসান হৃদয় (১৮), মো. ইমন(১৯), এসএসসি পরীক্ষার্থী তছমির পাবেল (১৬) ও মো. সৈকত (১৮)। ঘটনায় একদিন পর ওই দূর্ঘটনার কথা মনে উঠলে মুহুর্তে মূহুর্তে চমকে উঠেন আহতরা। তারা কোনভাবেই ভুলতে পারছেননা সেই মুহুর্তের কথা। আজ শনিবার চমেক হাসপাতালে কথা হয় তাদের সাথে। আহত শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, আমাদের সব আনন্দ এক নিমিষেই পিসে গেল চলন্ত ট্রেনে। কোন কিছু বোঝার আগেই মৃত্যুকূপে ঝাঁপ দিয়েছি আমরা। তছমির পাবেল (১৬) বলেন, আর পারছিনা। ওদরে সাথে আমি চলে গেলে এত কষ্ট হতোনা। যেমন শারিরীক কষ্ট, তেমনি শোকের।


আহত ইমন বলেন, রেলক্রসিংয়ে কোনো ব্যারিকেড ছিল না। সেখানে গেটম্যানও ছিলো না। মাইক্রোবাস যখন একেবারে লাইনের ওপর উঠে যায়, ঠিক তখন খুব জোরে ট্রেনের হুইসেল শুনতে পাই। মুহূর্তেই ট্রেন আমাদের মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয়। এরপর অনেক দূর পর্যন্ত ঠেলে নিয়ে যায়। যেদিক দিয়ে ট্রেন মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়েছে, তার উল্টো দিকে জানালার পাশে ছিলাম আমি। ট্রেনের গতি যখন কমে যায়, অনেকটাই থেমে গেলে জানালা দিয়ে আমি বেরিয়ে আসি। এরপর আশপাশের লোকজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

জানা গেছে, নিহতরা সবাই হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার এলাকার বাসিন্দা। মাইক্রোবাসচালক ছাড়া বাকিরা ওই এলাকার যুগিপাড়ায় অবস্থিত আর অ্যান্ড কোচিং সেন্টারের ছাত্র ও শিক্ষক।

এদিকে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ জন যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবুল কালাম আজাদ।


তিনি বলেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাদ্দামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তে দুইটি কমিটি করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাদ্দাম রেলওয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় গেটম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে শুক্রবার রাতে সাদ্দামকে আসামি করে জিআরপি চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. জহির একটি মামলা দায়ের করেন। শনিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

অন্যদিকে মিরসরাইয়ে ট্র্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনের পরিবারকে দাফন-কাফন বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। এছাড়া আহতদের পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর দেড়টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ তথ্য জানান হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহেদুল আলম। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুর ২টায় মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় ছয় জন আহত হয়েছেন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সর্বশেষ