চট্টগ্রামের পটিয়ায় মাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ছেলে মাইনুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে পালানোর সময় বাকলিয়া থানাধীন নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জেলার সাতকানিয়া থানাধীন রসুলপুর এলাকার একটি গুদামঘর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পটিয়ার সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আক্তার। এক মাস আগে শামসুল আলম মাস্টার অসুস্থতায় মারা যান। তার বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। এসব অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে তা যাচাই করতে মঙ্গলবার সকালে মেয়ে শায়লা শারমিন নিপাকে নিয়ে জেসমিন আক্তার ব্যাংকে যান। ব্যাংক থেকে ফেরার পর ছেলে মাইনুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাকে না বলে কেন ব্যাংকে গেছে তা নিয়ে মা ও বোনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়।’
তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে মাইনুল কোমর থেকে অস্ত্র বের করে প্রথমে বড় বোনকে গুলি করে। গুলিটি বোনের শরীরে না লেগে দেয়ালে লাগে। পরে মাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। ওই গুলি মায়ের বাম চোখে লাগে। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেফতার মাইনুল জানিয়েছে, মাকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি ছিল তার প্রয়াত বাবার। তার বাবার অফিস থেকে এ অস্ত্র নিয়েছে বলেও দাবি করেছে মাইনুল। ঘটনার পর সেই অস্ত্রটি সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে যায়। আশ্রয় নেয় চকরিয়ার এক পরিচিত ব্যক্তির কাছে। পরে সাতকানিয়ায় যায়। সাতকানিয়ার রসুলপুর এলাকার একটি গুদামঘরে অস্ত্র রাখে। এর আগে গ্রেফতার এড়াতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পুকুরে ফেলে দেয়। সাতকানিয়ার কেরানিরহাট থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে ওঠে। নতুন ব্রিজ এলাকায় এলে তাকে বাস থেকে গ্রেফতার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের ছিল মাইনুল। একসময় সে অস্ট্রেলিয়ায় ছিল। সে দেশের নিয়ম ভঙ্গের কারণে তার ভিসা বাতিল করা হয়। দেশে আসার পর মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়েন। উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণে পরিবার তাকে অপছন্দ করতো। গ্রেফতার মাইনুল এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, তাকে (মাইনুল) যদি ছোটবেলা থেকে নজরদারির মধ্যে রাখা হতো তাহলে এমন উচ্ছৃঙ্খল হতো না। তাই সন্তানের দিকে নজর রাখুন। সন্তান কী করে, কোথায় যায় এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।’
তবে নিহতের বড় মেয়ে মেয়ে শায়লা শারমিন নিপা দাবি করেন, ‘আমার মাকে যে অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে সেটি কখনও আমার বাবার হতে পারে না। সে বিভিন্ন উচ্ছৃঙ্খল মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে। হয়তো তাদের কাছ থেকে এ অস্ত্র পেয়েছে। আমি মাকে হারিয়েছি। মা হত্যার বিচার চাই।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমি আমার স্বামীসহ অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করি। কয়েক মাস আগে দেশে বেড়াতে এসেছি। আমার ভাই মাইনুল নেশা করতো। সবসময় পরিবারের সম্পত্তির ওপর লোভ তার। তবে মা-বাবার ভয় ছিল সে বেশি টাকা পয়সা সম্পত্তি পেলে আরও বেপরোয়া হতে পারে। এ কারণে সম্পত্তি ভাগ করে দেয়নি।’